জয়পুর: রাজস্থানের জোধপুর, জয়সলমের এবং জালোর জেলায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং রাজস্থানের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) যৌথভাবে একটি বড় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে তিনজন মাদ্রাসার শিক্ষক আয়ুব, মাসুদ এবং উসমান এবং দুজন যুবক জুনায়েদ এবং আরেকজন। অভিযোগ, তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং বিদেশ থেকে তহবিল পাচ্ছে।
অভিযানে গোপনীয় নথি, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং সন্দেহজনক ডকুমেন্টস বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই ঘটনা রাজস্থানের অ-নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোকে আবার স্ক্যানারের আওতায় এনেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে নজরদারির লক্ষ্যবস্তু। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তদন্ত নজরদারি নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য কোনো সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্য নেই।
বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপি সংসদকে খুনের হুমকি
অভিযানটি শুক্রবার ভোর পাঁচটায় শুরু হয়। এনআইএ, এটিএস এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি) যৌথ দলগুলো জোধপুরের চৌখা এবং পিপার এলাকায় আয়ুব এবং মাসুদকে গ্রেফতার করে। আয়ুব চৌখার আরব মাদ্রাসায় শিক্ষক ছিলেন, যেখানে তিনি গত দশক ধরে শিক্ষাদান করছিলেন। মাসুদ এবং উসমান ভাই, যারা জয়সলমের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং জালোরের সাঞ্চোরে একটি মাদ্রাসায় যুক্ত ছিলেন।
জুনায়েদকে জোধপুরের পিপার থেকে এবং আরেকজনকে জালোর থেকে ধরা হয়েছে। এনআইএ সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাজেয়াপ্ত নথিগুলোতে বিদেশি তহবিলের লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে, যা মাদ্রাসা পরিচালনার নামে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সন্দেহ।
অভিযানের সময় কোনো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন।রাজস্থানের এই অভিযান পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় সন্ত্রাসবাদী গতিবিধির বাড়তি সতর্কতার অংশ। জোধপুর, জয়সলমের এবং জালোর পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী, যেখানে লস্কর-ই-তৈবা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো সংগঠনের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।
তদন্তকারীরা জোর দিয়ে বলছেন, এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিহিংসা নয়। “আমরা শুধু আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করছি। মাদ্রাসাগুলো শিক্ষার কেন্দ্র, কিন্তু অ-নিবন্ধিত হলে তাদের অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে,” বলেছেন এনআইএ-এর এক কর্মকর্তা।অ-নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলো রাজস্থানে এক বড় সমস্যা। রাজ্যে প্রায় ১৫,০০০ মাদ্রাসা রয়েছে, যার মধ্যে ৪০ শতাংশ নিবন্ধনহীন।
এগুলোর মাধ্যমে বিদেশি তহবিল বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবেশ করে, যা জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হয় বলে অভিযোগ। ২০২৩ সালে রাজস্থান সরকার মাদ্রাসা নিবন্ধন আইন কঠোর করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নে বাধা রয়েছে। এই অভিযানের পর স্থানীয় মুসলিম নেতারা বলছেন, “আমরা নজরদারির বিরোধী নই, কিন্তু এটি যেন সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত না করে। সত্যিকারের অপরাধীদের শাস্তি দিন, নির্দোষদের জড়াবেন না।”


