নয়াদিল্লি: ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) বি.আর. গাভাই তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতি সূর্যকান্তের নাম কেন্দ্রের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করেছেন। বিচারপতি গাভাইয়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ নভেম্বর। আইন মন্ত্রকের সম্মতি মিললেই বিচারপতি সুর্যকান্ত দেশের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তাঁর কার্যকাল থাকবে ২০২৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ১৪ মাসের।
ভারতের বিচারব্যবস্থায় প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের সর্বাধিক জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকেই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়।
হরিয়ানার মাটি থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের শীর্ষে Next Chief Justice of India recommended
বিচারপতি সূর্যকান্তের জীবনযাত্রা এক অনুপ্রেরণার গল্প। ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার হিসার জেলার এক সাধারণ গ্রামে জন্ম। পরিবারের কেউ আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, নিজের অধ্যবসায় ও মেধাতেই তিনি পৌঁছেছেন বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আসনে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। গ্রামীণ বিদ্যালয়েই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি মহার্শি দয়নন্দ বিশ্ববিদ্যালয় (MDU) থেকে ১৯৮৪ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রথমে হিসারের জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে আইনচর্চা শুরু করেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি হন হরিয়ানার সর্বকনিষ্ঠ অ্যাডভোকেট জেনারেল।
বিচারপতি থেকে প্রধান বিচারপতির পথে
২০০৪ সালে তাঁকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি একাডেমিক চর্চাও অব্যাহত রাখেন, ২০১১ সালে কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে উন্নীত হন। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ মে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ রায় ও বিচারধারার পরিচায়ক
বিচারপতি সূর্যকান্তের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ২০২৩ সালে সংবিধান বেঞ্চের সদস্য হিসেবে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখা। এই ঐতিহাসিক রায় দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রায় আসে ২০২২ সালে, যখন সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে দেশে বিদ্যমান দেশদ্রোহ আইন (Sedition Law) প্রয়োগ আপাতত স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেয় এবং সব চলতি মামলা ও কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
প্রথম হরিয়ানাবাসী প্রধান বিচারপতি হওয়ার সম্ভাবনা
বিচারপতি সূর্যকান্ত যদি আনুষ্ঠানিকভাবে নিযুক্ত হন, তবে তিনি হবেন ভারতের ইতিহাসে প্রথম হরিয়ানাবাসী প্রধান বিচারপতি। শান্ত, ভারসাম্যপূর্ণ ও সুগভীর রায়দানের জন্য সুপরিচিত এই বিচারপতি দেশের বিচারব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের বিচারব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এই মনোনয়ন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্বে স্থিরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিচারপতি সূর্যকান্তের যাত্রা- এক সাধারণ গ্রামের ছেলে থেকে দেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ার সম্ভাব্য অধ্যায়, নিঃসন্দেহে ভারতীয় ন্যায়বিচারের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


