ভারতের আর্থিক সচিব তুহিন কান্ত পান্ডে সম্প্রতি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)-এর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ কমিটি তার নিয়োগ অনুমোদন করেছে এবং তিনি তিন বছরের জন্য এই পদে দায়িত্ব নেবেন।
তুহিন কান্ত পান্ডে মাধাবী পুরী বুচের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন, যিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে SEBI-র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। মাধাবী পুরী বুচের নেতৃত্বে SEBI অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে তার নেতৃত্বের সময়কালে আদানি গ্রুপের অফশোর তহবিল সংক্রান্ত অভিযোগ সামনে আসে, যা প্রথমে হিনডেনবার্গ রিসার্চের মাধ্যমে উত্থাপিত হয়। এই অভিযোগগুলির কারণে SEBI-এর ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা হয়। ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
একজন অভিজ্ঞ আমলতি, তুহিন কান্ত পান্ডে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ভারতের আর্থিক সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগেও তিনি সরকারের বিভিন্ন বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যেমন জানুয়ারি ২০২৫-এ তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি তার পেশাদার জীবনে পাবলিক এন্টারপ্রাইজ (DPE), পर्सোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (DoPT) এবং ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (DIPAM) বিভাগের সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন, যা দেশের আর্থিক নীতিমালা ও সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তুহিন কান্ত পান্ডের নিয়োগের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক আদেশে নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “মন্ত্রিপরিষদ নিয়োগ কমিটি শ্রী তুহিন কানতা পান্ডে, IAS (OR:1987), আর্থিক সচিব এবং রাজস্ব বিভাগের সচিবকে SEBI চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ অনুমোদন করেছে। তিনি তিন বছরের জন্য এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন বা যতদিন না পরবর্তী আদেশ আসে, যতটুকু আগে হতে পারে।”
মাধাবী পুরী বুচের নেতৃত্বে SEBI অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছে। তার অধীনে, ভারতীয় শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আর্থিক সংস্কারের পথ তৈরি করেছে। তবে তার নেতৃত্বের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিয়ে SEBI-এর ভূমিকা।
মাধাবী পুরী বুচ ছিলেন SEBI-র প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান, যা তাকে একটি ঐতিহাসিক চরিত্রে পরিণত করে। তার নেতৃত্বে SEBI বিভিন্ন ধরনের আর্থিক বাজারের সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন করেছে।
তুহিন কান্ত পান্ডে SEBI-এর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন। SEBI-এর আগামী দিনের কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বাজারের স্বচ্ছতা এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বিভিন্ন নীতিগত পরিবর্তন আনা হবে। তার নিয়োগের পর, বিশেষত আর্থিক বাজারে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। বিশেষ করে, বাজারে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।
আগামী দিনে SEBI-এর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন চেয়ারম্যানের প্রতি প্রত্যাশা বাড়ছে।
মাধাবী পুরী বুচের আগে, অজয় ত্যাগী ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত SEBI চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে, ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত UK সিনহা SEBI চেয়ারম্যান ছিলেন, যিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটরি পরিবর্তন এবং বাজারের সংস্কারের দিকে নজর দিয়েছিলেন।
তুহিন কান্ত পান্ডে SEBI-তে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতীয় শেয়ার বাজার এবং সিকিউরিটিজ সেক্টরে আরও সংস্কার ও উন্নতির দিকে মনোযোগ দেবেন।