নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে ১৮ জন নিহত এবং একাধিক আহত হওয়ার পর, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ (Crowd Control at Railway) গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকল প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়মিত ট্রেন চলাচল অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন এখনও যাত্রীদের ভিড়ের মুখে পড়ছে, বিশেষত যারা মাঘ কুম্ভ মেলা উপলক্ষে প্রয়াগরাজে যাচ্ছিলেন। কুম্ভ মেলা উপলক্ষে প্রচুর যাত্রী আসতে শুরু করেছে, যার ফলে স্টেশনে অত্যধিক ভিড় দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
নতুন দিল্লি স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে স্টেশন এলাকার ভিতর এবং বাইরে আটটি আধাসেনা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়াগরাজগামী ট্রেনগুলোর চলাচল নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ব্যারিকেড স্থাপন করেছি, পেট্রোলিং জোরদার করেছি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দলের সদস্যদের মোতায়েন করেছি। সিসিটিভি নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে এবং রিয়েল-টাইম ফুটেজ মনিটরিং করা হচ্ছে।”
জনসমাগমের সমস্যা আরও বেড়েছে মাঘ কুম্ভ মেলা উপলক্ষে, তাই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্টেশন এলাকার বাইরে যাত্রীদের জন্য বিশ্রামের একটি ‘পান্ডাল’ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তারা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। এই ‘পান্ডাল’টি ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকবে, যখন মাঘ কুম্ভ মেলা শেষ হবে।
কুম্ভ মেলা যাত্রার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা
রেলওয়ে মন্ত্রী আশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন যে, ৬০টি স্টেশনে উচ্চ ভিড়ের কারণে পৃথকভাবে ‘হোল্ডিং এরিয়া’ তৈরি করা হবে। এছাড়াও, এক নতুন জনসমাগম ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল তৈরি করা হবে, যা যাত্রীদের সিঁড়ির ওপর বসতে নিষেধ করবে। তিনি আরও জানান যে, যাত্রীদের সচেতন করার জন্য প্রচারমূলক কার্যক্রম চালানো হবে।
ইস্ট সেন্ট্রাল রেলওয়ে (ECR) এর পদক্ষেপ
ইস্ট সেন্ট্রাল রেলওয়ে (ECR) সোমবার ঘোষণা করেছে যে, মহা কুম্ভ মেলার জন্য বিহার জুড়ে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়ের কারণে তারা স্টেশনগুলোতে টিকিট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সাহায্য করছে। CPRO (Chief Public Relations Officer) আরো জানান, “যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সরবরাহ করা হয়েছে।”
এছাড়া, যাত্রীদের চাপে পড়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আরও অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেছে। পাটনা জংশন থেকে প্রতিদিন কুম্ভ মেলা স্পেশাল ট্রেন চলাচল করছে যেগুলো অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে সাহায্য করছে। বিহারের পাটনা, দানাপুর, আরা, গয়া, সাসারাম, মুজাফফরপুর, সীতামারি এবং দারভাঙ্গা স্টেশনগুলোতে এই ভিড় বেশ লক্ষণীয়।
গঙ্গা নদীতে এক অভিনব যাত্রা
কুম্ভ মেলা উপলক্ষে যাত্রীদের ভিড়ের কারণে সড়কপথে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে প্রয়াগরাজ যাওয়ার পথে। এই যানজট এড়াতে বিহারের বক্সার জেলার কামহরিয়া গ্রামের সাতজন পুরুষ গঙ্গা নদী দিয়ে প্রয়াগরাজ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা একটি মোটরচালিত নৌকায় ২৭৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বক্সার থেকে প্রয়াগরাজ পৌঁছান। ১১ ফেব্রুয়ারি তারা যাত্রা শুরু করেন এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজ পৌঁছান। তারা এখন তাদের গ্রামে ফিরে গেছেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যেখানে তাদের সাহসিকতা প্রশংসিত হচ্ছে।
সংকট মোকাবিলার জন্য নতুন পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ভিড় সামলাতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। স্টেশনগুলোতে নতুন ধরনের জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জরুরি সেবার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাত্রীদের জন্য নতুন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে, যাতে তারা ট্রেনের সময়সূচী, প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন, এবং অন্যান্য জরুরি তথ্য সময়মতো পেতে পারেন।
পাশাপাশি, রেলওয়ে স্টেশনগুলোর ডিজিটালাইজেশনের দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে যাতে যাত্রীদের সঠিক তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও, প্রতিটি স্টেশনে উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে যে, এই পদক্ষেপগুলির ফলে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কার্যকরভাবে সাহায্য হবে এবং যাত্রীদের জন্য আরও নিরাপদ ও সুগম যাত্রা নিশ্চিত হবে।