প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশের বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে নয়া দিগন্ত

গুজরাটের হনসলপুরে মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল ভারত (Electric Vehicle)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিডিএস লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্ল্যান্টে হাইব্রিড ব্যাটারি ইলেক্ট্রোডের স্থানীয় উৎপাদনের উদ্বোধন করেন।…

Electric Vehicle

গুজরাটের হনসলপুরে মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হল ভারত (Electric Vehicle)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিডিএস লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্ল্যান্টে হাইব্রিড ব্যাটারি ইলেক্ট্রোডের স্থানীয় উৎপাদনের উদ্বোধন করেন। এই উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারত তার দূষণমুক্ত শক্তি উদ্যোগ এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

এই প্রকল্পটি টোশিবা, ডেনসো এবং সুজুকি মোটরসের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে, যা ভারতের বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদী সুজুকি মোটরসের গ্লোবাল ব্যাটারি ইলেক্ট্রিক যানবাহন রফতানি প্রকল্পেরও শুভারম্ভ করেন, যা ১০০টি দেশে এই যানবাহন রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ করবে।

   

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই অনুষ্ঠানে বলেন, “এই প্রকল্প ভারতের সবুজ শক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতীক। আমরা কেবলমাত্র পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি না, বরং আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকেও বাস্তবায়িত করছি।”

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, এই উদ্যোগ ভারতের যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। হাইব্রিড ব্যাটারি ইলেক্ট্রোড উৎপাদন ভারতের বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে আরও স্বাবলম্বী করবে।

গুজরাটের এই নতুন কারখানাটি ভারতের শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের বৈদ্যুতিক যানবাহন বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে প্রস্তুত। সুজুকি মোটরসের সহযোগিতায় এই কারখানা থেকে উৎপাদিত ব্যাটারি ইলেক্ট্রোডগুলি উচ্চমানের এবং পরিবেশবান্ধব হবে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

এছাড়াও, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ১০০টি দেশে ব্যাটারি চালিত যানবাহন রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

এই উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী আমেদাবাদে ১৪০০ কোটি টাকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে সর্দার ধাম গার্লস হস্টেলের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন, যা মেয়েদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই হস্টেলে ৩০০০ ছাত্রী থাকতে পারবেন, যা গুজরাটের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় অবদান। প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি ভাষণ দিয়ে বলেন, “আমাদের যুব সম্প্রদায়ই ভারতের ভবিষ্যৎ। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে আমরা বিকশিত ভারত গড়ে তুলব।”

Advertisements

এই সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী আমেদাবাদে একটি জনসভায় ভাষণ দেন, যেখানে তিনি ভারতের স্বনির্ভরতা এবং বিকশিত ভারতের স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “বিশ্ব যখন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের সামনে স্বনির্ভর হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।

আমাদের যুবকদের দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করব।” তিনি মুদ্রা যোজনা এবং পি এম বিকশিত ভারত যোজনার মতো সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এগুলি যুবকদের কর্মসংস্থান এবং উদ্যোগী মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়ক হচ্ছে।

গুজরাট সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পগুলি ভারতের শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন গতি সঞ্চার করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে গুজরাট দীর্ঘদিন ধরে শিল্প উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

‘ভাইব্রান্ট গুজরাট’ শীর্ষ সম্মেলনের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি গুজরাটকে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই হাইব্রিড ব্যাটারি কারখানার উদ্বোধনও সেই ধারাবাহিকতার একটি অংশ।

এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসারে ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে। বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে এই কারখানা ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং বিশ্ববাজারে দেশের অবস্থানকে আরও মজবুত করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এই উপলক্ষে বলেন, “আমরা কেবলমাত্র ব্যাটারি উৎপাদন করছি না, বরং ভারতের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।”

জার্মানি থেকে পাওয়া সাবমেরিনটিকে ‘দানব’ বানিয়ে তুলবে ডিআরডিও

এই উদ্বোধন ভারতের সবুজ শক্তি উদ্যোগে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। গুজরাটের এই প্রকল্প ভারতের শিল্প, অর্থনীতি এবং পরিবেশগত টেকসইতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বের শীর্ষ সবুজ শক্তি উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে আরও একটি পদক্ষেপ।