নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে (New Delhi Station) ট্রেনের বিলম্বের কারণে যাত্রীদের দ্বিগুণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে গরমের কারণে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেস (১৫১২৮) তার নির্ধারিত সময়ের থেকে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে নয়াদিল্লি থেকে ছাড়ে। এর ফলে ইন্দোরগামী ইন্দোর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস (২০৯৫৮)-এর যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে অসুবিধায় পড়তে হয়। এই ট্রেনটি তার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৫০ মিনিট বিলম্বে ইন্দোরের উদ্দেশে রওনা হয়।
ট্রেনের বিলম্বে যাত্রীদের দুর্দশা
জানা গেছে, বারাণসী থেকে দিল্লি আসা কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেস শনিবার সকালের পরিবর্তে সন্ধ্যায় রাজধানীতে পৌঁছায়। এরপর একই ট্রেনটি সন্ধ্যায় আবার কাশীর উদ্দেশে রওনা করা হয়। ট্রেনটির বিলম্বের কারণে কাশীগামী যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়। এই বিলম্বের প্রভাব পড়ে ইন্দোরগামী ইন্দোর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের উপরেও। এই ট্রেনটি সাধারণত সন্ধ্যা ৭:১৫-এ প্ল্যাটফর্ম নম্বর আট থেকে ছাড়ে, কিন্তু কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেসের জন্য এটি বিলম্বিত হয়।
রেলওয়ে কর্মীদের বক্তব্য
প্ল্যাটফর্ম নম্বর আটে উপস্থিত রেলওয়ে কর্মীরা জানান, কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেস বিলম্বের কারণে প্ল্যাটফর্ম নম্বর আটে রাখা হয়েছিল। এরপর সেখানেই ট্রেনটির পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং তারপর তা কাশীর উদ্দেশে রওনা করা হয়। এই ট্রেনটি নিয়মিত বারাণসীর জন্য চলাচল করে। এর ফলে ইন্দোর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসও বিলম্বিত হয়। এই ট্রেনটি সপ্তাহে তিন দিন—সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং শনিবার—নয়াদিল্লি থেকে ইন্দোরের উদ্দেশে ছাড়ে।
প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের দুর্ভোগ
স্টেশনে উপস্থিত ইন্দোরগামী যাত্রীরা জানান, সপ্তাহে তিন দিন চলা এই ট্রেনে পরিচ্ছন্নতার বড় সমস্যা রয়েছে। ট্রেনটি না ধোয়া হয়, না ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয়। এসি ফার্স্ট ক্লাস এবং এসি সেকেন্ড ক্লাসের শৌচাগারগুলোও সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। স্লিপার শ্রেণির অবস্থা আরও খারাপ। রাতে অনেক সময় শৌচাগারে পানিও ফুরিয়ে যায়। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, প্ল্যাটফর্মে রোদে দাঁড়িয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেখানে বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ ছিল না, পানীয় জলেরও ব্যবস্থা ছিল না। বয়স্ক যাত্রী এবং মহিলারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন।
একজন যাত্রী বলেন, “ট্রেনটি প্রায় ৫০ মিনিট বিলম্বে ছাড়ল। এত সময় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়েছে, কিন্তু কোনও সুবিধা ছিল না। গরমে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি।” আরেকজন যাত্রী জানান, “ট্রেনের ভিতরের অবস্থা দেখলে মনে হয় না এটি একটি সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস। শৌচাগারের দুর্গন্ধে থাকা যায় না।”
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
ট্রেন বিলম্ব নিয়ে আমার উজালার প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, “কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেসের বিলম্বের কারণে ইন্দোরগামী ট্রেনটিও দেরি করে ছেড়েছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাত্রীদের কোনও অসুবিধা না হয়। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বলতে গেলে, ট্রেনগুলো প্ল্যাটফর্মে আসার পরও অনেক সময় পরিষ্কার করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেনগুলো ইয়ার্ডে ধোয়া ও পরিষ্কার করে প্ল্যাটফর্মে আনা হয়। প্ল্যাটফর্মে আসার পরও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চেকিংয়ের পর ট্রেনটি তার গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়ে।”
চলন্ত ট্রেনে চুরির ঘটনা
যাত্রীরা আমার উজালাকে জানান, ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৫০ মিনিট বিলম্বে ছাড়ার পর নয়াদিল্লি স্টেশন পার হতেই এর গতি কমে যায়। এই সময় এসি সেকেন্ড ক্লাসের এ-টু কোচের দরজা দিয়ে একজন চোর ঢুকে পড়ে। চোরটি দ্রুত হাতে একজন মহিলার পার্স ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। মহিলা ও তার স্বামী চিৎকার করলেও কোনও রেলওয়ে কর্মী সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। ভয় পেয়ে ওই মহিলা তিলক ব্রিজ স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে যান।
একজন যাত্রী বলেন, “ট্রেন এত ধীরে চলছিল যে চোর সহজেই ঢুকে পড়ল। আমরা চিৎকার করলাম, কিন্তু কেউ এল না। এই ঘটনার পর আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় হচ্ছে।”
যাত্রীদের অভিযোগ ও প্রত্যাশা
ইন্দোর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রীরা জানান, এই ট্রেনে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা। স্লিপার কোচে পরিস্থিতি আরও খারাপ। অনেক সময় রাতে শৌচাগারে পানি না থাকায় যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয়। প্ল্যাটফর্মে বসার জায়গা ও পানীয় জলের অভাবে বয়স্ক ও মহিলা যাত্রীরা বিশেষভাবে কষ্ট পান।
একজন বয়স্ক যাত্রী বলেন, “এত দামি টিকিট কেটে যদি এই পরিষেবা পাই, তাহলে ট্রেনে ভ্রমণের কী মানে থাকে? রেলওয়ের উচিত এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা।” আরেকজন মহিলা যাত্রী জানান, “প্ল্যাটফর্মে ছায়া নেই, বসার জায়গা নেই। আমরা গরমে হাঁপিয়ে উঠেছি।”
রেলওয়ের প্রতিশ্রুতি
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, তারা যাত্রীদের সুবিধার জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রেন বিলম্বের ক্ষেত্রে অন্য ট্রেনের সময়সূচির উপর নির্ভরতা একটি বড় সমস্যা। তবে পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তার বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
নয়াদিল্লি স্টেশনে কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেসের বিলম্বের কারণে ইন্দোর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রীদের দুর্ভোগ একটি সাধারণ চিত্র। এই ঘটনা রেলওয়ের সময়ানুবর্তিতা, পরিচ্ছন্নতা এবং যাত্রী সুবিধার ক্ষেত্রে উন্নতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। চলন্ত ট্রেনে চুরির ঘটনা নিরাপত্তার দুর্বলতাও প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের প্রত্যাশা, রেলওয়ে এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করে তাদের ভ্রমণকে আরও সুবিধাজনক ও নিরাপদ করবে।