পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত শানাতে জরুরি বৈঠক নয়া দিল্লিতে

জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে, প্রত্যাঘাত শানাতে নয়া দিল্লিতে (new delhi) একটি জরুরি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে…

new delhi meeting of deffence

জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে, প্রত্যাঘাত শানাতে নয়া দিল্লিতে (new delhi) একটি জরুরি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ), সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড (এনএসজি), কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ) এবং অসম রাইফেলসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।

   

পহেলগাঁওয়ের হামলা

পহেলগাঁওয়ের বাইসারান মেডোতে লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) দ্বারা সংঘটিত এই হামলা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকার সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। হামলায় বেশিরভাগ পর্যটক নিহত হন, যার মধ্যে একজন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার এবং একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। ভারত সরকার এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দায়ী করেছে, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

বৈঠকে উপস্থিত (new delhi)

বৈঠকে (new delhi) উপস্থিত সিআইএসএফ, বিএসএফ, এনএসজি, সিআরপিএফ এবং অসম রাইফেলসের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। সিআইএসএফ, যিনি সংবেদনশীল সরকারি ও শিল্প স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, বিমানবন্দর, মেট্রো রেল এবং সংসদ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলে ধরেন (new delhi)। বিএসএফ, যারা ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এবং এলওসি-তে মোতায়েন রয়েছে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে অতিরিক্ত নজরদারি এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এনএসজি, যারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বিশেষজ্ঞ, জম্মু ও কাশ্মীরে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় তাদের কমান্ডো ইউনিট প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে। সিআরপিএফ, যারা পাহালগাম হামলার পর প্রথম সাড়া দিয়েছিল, তাদের ভূমিকা বৈঠকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় (new delhi)। সূত্র জানায়, পাহালগামে সিআরপিএফ-এর ১১৬তম ব্যাটালিয়ন, যারা রাস্তা ও এলাকা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিল, হামলার খবর পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল।

তবে, বাইসারানের দুর্গম ভূখণ্ড এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অনুপস্থিতি হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। অসম রাইফেলস, যারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং অন্যান্য সংবেদনশীল এলাকায় তাদের নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা শেয়ার করেছে।

বৈঠকে (new delhi) সরকার পাহালগামে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি স্বীকার করেছে। বাইসারান মেডোতে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি না থাকা এবং গোয়েন্দা তথ্যের অপ্রতুলতা এই হামলার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা—ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ—একযোগে ব্যর্থ হয়েছিল, যা হামলাকারীদের জন্য পথ সুগম করে। এই ত্রুটি পূরণে সরকার পাহালগামের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে স্থায়ী নিরাপত্তা মোতায়েন এবং অমরনাথ যাত্রার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে।

EOW-এর চার্জশিটে নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য, PMC ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বড় ফাঁস

ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) গৃহীত পদক্ষেপগুলি পর্যালোচনা করা হতে পারে । এর মধ্যে রয়েছে ইন্দুস ওয়াটার ট্রিটি স্থগিত করা, অটারি চেকপোস্ট বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল। এছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান তীব্র করা হয়েছে, যেখানে ১৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের বাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে।

এলওসি-তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অব্যাহত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী কঠোর জবাব দিচ্ছে। ২৮-২৯ এপ্রিল রাতে কুপওয়ারা, বারামুলা এবং আখনুর সেক্টরে পাকিস্তানি গুলির জবাবে ভারতীয় সৈন্যরা কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে (new delhi)। এই বৈঠকে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ রোধে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। পাকিস্তান-ভিত্তিক “আইওকে হ্যাকার” গোষ্ঠী কর্তৃক আর্মি পাবলিক স্কুল এবং অন্যান্য কল্যাণমূলক ওয়েবসাইটে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে। ভারতের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই হামলাগুলি রিয়েল-টাইমে সনাক্ত করে এবং উৎস পাকিস্তানে চিহ্নিত করে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতির উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।” বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এই হামলার তদন্ত ত্বরান্বিত করবে এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ধ্বংসে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো হবে।

এই জরুরি বৈঠক (new delhi) ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। পাহালগাম হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সামরিক, সাইবার এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।