তিরুপতি মন্দিরের (Tirupati Temple) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম (TTD) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আর এই সিদ্ধান্ত সেই মন্দিরে কর্মরত অ-হিন্দু কর্মচারীদের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চলেছে। সোমবার, তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম (TTD) বোর্ড একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। সেই অনুযায়ী, মন্দিরে কর্মরত অ-হিন্দু কর্মচারীদেরকে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করতে অথবা অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের অন্য কোনো দপ্তরে বদলি হতে হবে।
এটি তিরুমালা মন্দিরের পরিচালনা ও প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম যা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হিন্দু মন্দির, তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে, একটি স্বাধীন সরকারী ট্রাস্ট হিসেবে কাজ করে। এটা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নয়। তিরুমালা মন্দিরে কর্মরত অ-হিন্দুদের সম্পর্কে বিতর্ক কিছুদিন ধরেই চলছিল।
বিষাক্ত ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকেছে দিল্লি, বাতাসের গুণমান সূচক পৌঁছেছে ৫০০-তে!
গত জুনে, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু সরকারের অধীনে এ ধরনের অভিযোগ উঠে, যেখানে হিন্দু কর্মচারীরা অভিযোগ করছিলেন যে, কিছু কর্মচারী অন্য ধর্মাবলম্বী। এই পরিস্থিতির মধ্যেই তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম (TTD) কর্তৃপক্ষ তাদের মন্দির পরিচালনা নীতি অনুযায়ী, তাদের প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম অ্যাক্ট এবং অন্ধ্রপ্রদেশ এন্ডাউমেন্টস অ্যাক্ট এর বিধি রয়েছে, যা মন্দিরে কর্মরতদের জন্য ধর্মীয় সংক্রান্ত শর্ত আরোপ করে। কর্মচারী ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের সমর্থন জানানো হয়েছে, যেহেতু তারা মনে করেন এটি অ্যাক্টের আওতায় রয়েছে এবং এটি পুরোপুরি কার্যকর হওয়া উচিত। একজন ইউনিয়ন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, “এটি পুরোপুরি কার্যকর করা উচিত।”
বাংলায় ২৫ হাজার ভুয়ো ভোটার কার্ড পেল কমিশন
তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম চেয়ারম্যান বিআর নায়ডু, যিনি অক্টোবর ৩১ তারিখে টিটিডি (TTD)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন যে, তিরুপতি মন্দির পরিচালনার জন্য শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়োগ করা উচিত। এই নির্দেশনা মন্দিরের ধর্মীয় গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মতামত প্রকাশ করেছেন।
ভারতীয় সংবিধানের ধারা ১৬(৫) অনুসারে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনা করা বৈধ। একইভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের চারিটেবল অ্যান্ড হিন্দু রিলিজিয়াস ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড এন্ডাউমেন্টস সাবর্ডিনেট সার্ভিস রুলস এর রুল ৩ অনুযায়ী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদেরকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হতে হবে।
১৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দিল্লি মেট্রোর চতুর্থ পর্বের ট্রায়াল রান শুরু
এই আইনি ভিত্তি গত বছরের নভেম্বরে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ে আরও দৃঢ় হয়, যখন আদালত রুল ৩-কে সমর্থন করে নিশ্চিত করেছে যে, ট্রাস্ট বোর্ডগুলো তাদের কর্মচারী নির্বাচন ও শর্তাবলী নির্ধারণের অধিকার রাখে। যার মধ্যে কর্মচারীদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার শর্তও অন্তর্ভুক্ত। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম (TTD)-এর এই সিদ্ধান্তটি একটি বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠন এই পদক্ষেপকে সংবিধানবিরোধী এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকার হিসেবে অনেকেই সমর্থন করেছেন। সেইসঙ্গে বলছেন যে, মন্দিরের আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় পরিবেশ বজায় রাখতে এটি প্রয়োজনীয়। এখন পর্যন্ত, টিটিডি (TTD) কর্তৃপক্ষের নেওয়া এই পদক্ষেপটি অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তবে এর পিছনে একটি স্পষ্ট আইনি এবং ধর্মীয় যুক্তি রয়েছে। তিরুমালা মন্দিরের পরিচালনার ক্ষেত্রে মন্দিরের ধর্মীয় গুরুত্ব ও ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদিও এর বাস্তবায়ন ও প্রভাব ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।