সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) দ্বাদশ শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষায় সাধারণ নন-প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য দীর্ঘ গণনার ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ কমানো। এই বিষয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হবে, যারা ক্যালকুলেটর ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করবে, যাতে সবার মধ্যে একরূপতা বজায় থাকে।
বর্তমানে সিবিএসই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এদিকে, কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এক্সামিনেশনস (সিআইএসসিই) ২০২১ সাল থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে আসছে। সিবিএসই-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “বোর্ডের পাঠ্যক্রম কমিটি প্রস্তাব করেছে যে, দ্বাদশ শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষায় সাধারণ, নন-প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক। এই ক্যালকুলেটরগুলো শুধুমাত্র সাধারণ আর্থিক গণনার জন্য প্রয়োজনীয় ফাংশন যেমন—যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ এবং শতাংশ গণনার কাজে সীমাবদ্ধ থাকবে।”
তিনি আরও জানান, “একটি প্যানেল গঠন করা হবে, যারা গ্রহণযোগ্য ক্যালকুলেটরের মডেল সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করবে। এর ফলে একরূপতা নিশ্চিত হবে এবং উন্নত বা প্রোগ্রামেবল ডিভাইসের ব্যবহার রোধ করা যাবে। পাঠ্যক্রম কমিটির যুক্তি হলো, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণাত্মক উত্তর এবং কেস স্টাডি অ্যাসাইনমেন্টে বেশি সময় দেওয়ার সুযোগ করে দেবে।” কমিটির মতে, ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি দিলে দীর্ঘ গণনার মানসিক চাপ কমবে, শিক্ষার্থীদের চাপ কমবে এবং পরীক্ষায় তাদের পারফরম্যান্স উন্নত হবে।
আরো দেখুন অনলাইন শপিংয়ে বড় ছাড়! ৭ এপ্রিল থেকে সেলার ফি কমাল অ্যামাজন
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সিবিএসই বিশ্লেষণাত্মক উত্তরের মান বাড়াতে, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি)-এর উচ্চতর চিন্তাশীল দক্ষতার উপর জোর দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা কেবল গণনার উপর নির্ভর না করে বিষয়টির গভীরতা বোঝার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে।
এছাড়াও, সিবিএসই বোর্ড আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে কম শিক্ষার্থীর সংখ্যাযুক্ত বিষয়গুলোর জন্য অন-স্ক্রিন মার্কিং (ওএসএম) সিস্টেমের পাইলট প্রকল্প এবং বোর্ড পরীক্ষায় নতুন পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করা। একজন কর্মকর্তা বলেন,
“শারীরিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন কেন্দ্রে পাঠানোর সময় কমাতে, বোর্ডের পরীক্ষা কমিটি অন-স্ক্রিন মার্কিং (ওএসএম) ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে উত্তরপত্র স্ক্যান করে ডিজিটালভাবে আপলোড করা হবে এবং মূল্যায়ন দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন হবে।”
তিনি আরও জানান, “ওএসএম প্রস্তাবটি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি বিষয়ে চালু হতে পারে। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির মূল পরীক্ষায়, বিজ্ঞান বা গণিতের সম্পূরক পরীক্ষায় এবং গণিতের পুনর্মূল্যায়নে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হতে পারে।” এই পদক্ষেপের ফলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত হবে বলে বোর্ডের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে, দীর্ঘ গণনার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে কলম-কাগজের উপর নির্ভর করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং চাপ সৃষ্টি করে। ক্যালকুলেটর ব্যবহারের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীরা এই সময় বাঁচিয়ে বিষয়ের বিশ্লেষণে বেশি মনোযোগ দিতে পারবে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং পরীক্ষার ফলাফলের উন্নতি ঘটাবে বলে মনে করছে পাঠ্যক্রম কমিটি।
একইসঙ্গে, ওএসএম ব্যবস্থা চালু হলে শিক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ আরও সহজ হবে। বর্তমানে উত্তরপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে সময় লাগে, যা মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। ডিজিটাল মূল্যায়নের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হবে এবং ফলাফল ঘোষণার সময় কমে আসবে।
সিবিএসই-এর এই প্রস্তাবগুলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের আগে প্যানেলের নির্দেশিকা এবং পাইলট প্রকল্পের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই পদক্ষেপগুলো সফল হলে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।