নেতাজির জন্মদিনে ঘুরে আসতে পারেন তাঁর স্মৃতি ঘেরা এই সমস্ত জায়গায়

আজ বাঙালির প্রিয় দেশনায়কের(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) জন্মদিন। শুধু দেশ নয় বাংলার প্রতিটি কোণায় কোণায় পালন হয় দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday)…

Netaji Subhas Chandra Bose Birthday: Explore These Historic Places Filled with His Memories

আজ বাঙালির প্রিয় দেশনায়কের(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) জন্মদিন। শুধু দেশ নয় বাংলার প্রতিটি কোণায় কোণায় পালন হয় দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) জন্মদিন। কারোর কাছে তিনি প্রিয় নেতা। কারোর কাছে তিনি জীবনের আদর্শ। তাকে দেখে বাঙালি তথা দেশবাসীর বিপ্লব শেখা। তাঁর কীর্তি আর কাহিনি শুনেই বাঙ্গালির বড় হওয়া। ভারতকে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে বার করে আনতে প্রাণ দিয়ে লড়েছিলেন এই বঙ্গ সন্তান। সুভাষের মৃত্যু নেই। বিপ্লবের মৃত্যু হয়না। বাঙালির কাছে অন্তত নেই। তাই বাংলা তাঁর মৃত্যুদিন পালন করে না। সুভাষের শুধুই জন্মদিন।

দেশনায়কের জন্মদিনে(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) অনেকে তাঁর ফ্রেমে বাঁধানো ফুল-চন্দন চর্চিত ছবির সামনে ভোগের মতো অর্পণ করেন পরমান্ন। কোথাও ফ্রেমে বাঁধানো সুভাষের ছবির সামনে গুরুজনেরা শিশুদের দেশ গড়ার পাঠ দেন। উদযাপন করেন আমাদের গর্ব নেতাজির জন্মদিন।

   

২৩ জানুয়ারি প্রিয় নেতার জন্মদিন(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) উদ্‌যাপন করতে পারেন একটু অন্য রকম ভাবে। পরিবারের সঙ্গে বা বাড়ির ছোটদের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন দেশনায়কের স্মৃতি জড়িয়ে থাকা কিছু জায়গায়।

নেতাজি ভবনঃ কলকাতায় অবস্থিত একটি স্মারক ভবন ও গবেষণা কেন্দ্র এই নেতাজি ভবন। এখানে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা চলে। ১৯০৯ সালে সুভাষচন্দ্রের বাবা জানকীনাথ বসু এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো এই বাড়িটির মালিক। এখানে একটি জাদুঘর, মহাফেজখানা এবং একটি গ্রন্থাগার রয়ছে। সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইপো শিশিরকুমার বসুর পুত্র সুগত বসু ও তার মা কৃষ্ণা বসু নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো পরিচালনা করেন। বিপ্লবের সূত্রপাত এই বাড়ি থেকেই। আবার এই বাড়িতেই সুভাষ গৃহবন্দিও হন। ১৯৪১ সালে বন্দি থাকাকালীনই লুকিয়ে বাড়ি ছাড়েন। তার পর বার্লিন যাত্রা, আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন, ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে এই বাড়িতে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং জওহরলাল নেহরু।

সুভাষের পৈতৃক ভিটেঃ ছোটবেলার কিছুটা সময় নেতাজি কাটিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়ায় তাঁর পৈতৃক ভিটেতে। বড় হওয়ার পরেও এসেছেন নিয়মিত। নিজের অসমাপ্ত জীবনীতে সুভাষ লিখে গিয়েছেন তাঁর ‘দেশের বাড়ি’ নিয়ে। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে বংশের ইতিহাসও। সুভাষ লিখেছেন তাঁদের বোস পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দশরথ বোস। তাঁর একাদশতম উত্তরসূরি মাহিপতি বোস বাংলার সুলতানের কাছে সুবুদ্ধি খান উপাধি পান। পান একটি জায়গিরও। সেই জায়গির কোদালিয়ার কাছেই মাহীনগরে। মাহীনগরে সুভাষের পূর্বসূরি মহিপতির বাড়ির ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেছিলেন জনকীনাথ। তার কাছেই সুভাষের পৈতৃক ভিটে। তাঁর ঠাকুরদা হরনাথ বোসের তৈরি বাড়ি ‘হরনাথ লজ’। গ্রামে রয়েছে বোসেদের মন্দিরও। সার দেওয়া সেই মন্দিরে দুর্গাপুজো হত। সুভাষ পুজোর সময় দেশের বাড়িতে যেতেনও। পুজোর কথা সুভাষ জেলবন্দি থাকাকালীন দাদা শরৎ বসুকে চিঠিতেও লিখেছিলেন।

সুভাষ জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর একটা সপ্তাহ তোমরা কোদালিয়াতেই থাকবে নিশ্চয়ই। জেলে আমরাও দুর্গাপুজোর আয়োজন করছি…।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়া অবশ্য এখন সুভাষগ্রাম। ২৩ জানুয়ারি সেখানে প্রতি বছরই অতিথি সমাগম হয়। বিদেশ থেকেও আসেন পর্যটকেরা। পৈতৃক বাড়িতে সারম্বরে পালন করা হয় নেতাজির জন্মদিন(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday)। নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে সাজিয়ে তোলা হয় গোটা বাড়িটি। সকাল থেকে নেতাজি পৈতৃক বাসভবনের সামনে ভিড় জমে। আজ সুভাষগ্রামের কোদালিয়ার এই বাসভবনকে দেখতে পান দর্শনার্থীরা।

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেলঃ প্রেসিডেন্সি কলেজের ঠিক পিছনে দিকেই রয়েছে একটি পাইস হোটেল। নাম স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। কলেজের যা বয়স, দোকানের বয়স তার চেয়ে খুব কম নয়। প্রেসিডেন্সির ছাত্রেরা মাঝেমধ্যে খেতেন ওই হোটেলে। তবে তাঁদের এক জন প্রায়ই ভাত খেতে আসতেন দুপুরে। ভালবাসতেন পুঁইশাকের চচ্চড়ি এবং মুড়িঘণ্ট। তাঁকে নিয়ে পরবর্তী কালে অনেক ইতিহাস রচিত হয়েছে। সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ১১৩ বছরের পুরনো হোটেলটিও। আজও প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি ওই ছাত্রটির জন্মদিন উদ্‌যাপন করে দোকানটি। প্রথম ১০০ জন ক্রেতার জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে তারা। সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে বেড়ানোর এক ফাঁকে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিতে পারেন সুভাষের গল্প শুনতে শুনতে। শুধু আজ নয়, বছরের যেকোনো দিন ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।

প্যারামাউন্টঃ এক দিকে কলকাতার বইপাড়া অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানের সঙ্গেও জুড়ে আছে নেতাজির স্মৃতি। তখন অবশ্য প্যারামাউন্ট তার নতুন নাম পায়নি। ওই জায়গায় যে দোকান ছিল, তার নাম ছিল প্যারাডাইস। সেই দোকানের লাগোয়া পিছনের দিকের একটি ঘরে বসত বিপ্লবীদের সঙ্গে সুভাষের গোপন বৈঠক। ১৯৩৪ সালে সেই আড্ডার খোঁজ পেয়ে দোকানটি বন্ধ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। যদিও কিছু দিন পরে দোকান আবার মাথা তোলে। সুভাষের গোপন বৈঠকের সেই ঘরটিতে এখন শরবত বানানো হয়। আজ সকাল বা বিকেলের যেকোনো সময় একবার ঢুঁ মারতে পারেন এখানে।

লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্সঃ এই সেই দোকান যার চপে মজেছিলেন স্বয়ং নেতাজী। বিশ্বায়নের ধাক্কায় অনেককিছু বদলে গেলেও একচুলও বদলায়নি নেতাজীর প্রিয় চপের দোকান। শুধু চপের দোকান বললে অবশ্য পুরোটা বলা হয় না। উত্তর কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগ্নিযুগের অজস্র বিপ্লবী আখড়াগুলিকে জুড়ে রেখেছিল যে সংযোগস্থলগুলি, এটিও তার একটি। ১৯১৮ সালে স্টার থিয়েটার থেকে ঢিলছোঁড়া দূরে তৈরি হয় এই চপের দোকান। দোকান না বলে গুমটি বলাই ভাল। ১৯১৮ উত্তর কলকাতার ইতিহাসে একটি প্রণিধানযোগ্য সন। এই বছরই স্বদেশীচেতনায় অনুপ্রাণিত যুবকেরা বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আয়োজন করছেন। এআইসিসি-র কর্ণধার নিযুক্ত হচ্ছেন নেতাজী সুভাষ। ২৩ জানুয়ারি(Netaji Subhash Chandra Bose Birthday) সন্ধ্যায় ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।