বিচার ব্যবস্থায় স্বজনপোষণ বিতর্ক! কাকার প্রভাবে ভাইপো নিয়োগ

সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম সম্প্রতি বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ১৪ জনের নাম সুপারিশ করেছে (Nepotism)। যার মধ্যে রয়েছেন রাজ দামোদর ওয়াকোডে, যিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই)…

Nepotism in judiciary

সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম সম্প্রতি বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ১৪ জনের নাম সুপারিশ করেছে (Nepotism)। যার মধ্যে রয়েছেন রাজ দামোদর ওয়াকোডে, যিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাইয়ের ভাইপো। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওয়াকোডের ক্যারিয়ার যদি স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যায়, তবে তিনি আগামী কয়েক দশক পরে ভারতের প্রধান বিচারপতি পদের জন্য বিবেচিত হতে পারেন।

এই সুপারিশ সামাজিক মাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ অনেকে এটিকে বিচার বিভাগে পারিবারিক প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। যদিও গাভাইয়ের পরিবার ওয়াকোডেকে ‘দূর সম্পর্কের আত্মীয়’ বলে উল্লেখ করেছে, তবে প্রতিবেদনে জানা গেছে যে তিনি প্রধান বিচারপতির ভাইপো।

   

২০২৫ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সিজেআই ভূষণ গাভাই, বোম্বে হাইকোর্টে ১৪ জন অ্যাডভোকেটকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। এই তালিকায় রাজ দামোদর ওয়াকোডের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একাধিক পোস্টে বলা হয়েছে যে, বিচারপতিদের পরিবারের সদস্যদের এভাবে উচ্চ পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হলে জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “যখন বিচারপতিদের পরিবারের সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়, তখন জনগণ কীভাবে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করবে?”

সূত্রের খবর অনুযায়ী সিজেআই গাভাই এই সুপারিশের আলোচনা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত কোনও ব্যক্তির নাম ছিল। তবে, এই সুপারিশের তালিকায় আরও দুজনের নাম উল্লেখযোগ্য, যারা গাভাইয়ের প্রাথমিক পেশাগত জীবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

অ্যাডভোকেট রঞ্জিতসিংহ রাজা ভোনসালে, যিনি প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা এস ভোনসালের পুত্র, এবং অ্যাডভোকেট মেহরোজ আশরাফ খান পাঠান, যিনি গাভাইয়ের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছিলেন, তাদের নামও এই তালিকায় রয়েছে। এই সংযোগগুলি বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিচারপতি গাভাই, যিনি ২০২৫ সালের ১৪ মে ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তিনি নিজে বোম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ছিলেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বোম্বে হাইকোর্টে কাজ করেছেন এবং ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।

Advertisements

তাঁর নেতৃত্বে কলেজিয়াম ইতিমধ্যে বোম্বে হাইকোর্টে পাঁচজন নতুন বিচারপতি নিয়োগ করেছে, যার ফলে বিচারপতির সংখ্যা ৬৯-এ পৌঁছেছে, যদিও অনুমোদিত সংখ্যা ৯৪।

এই সুপারিশ নিয়ে বিতর্কের মূলে রয়েছে বিচার বিভাগে স্বজনপোষণের অভিযোগ। সমালোচকরা বলছেন যে, এই ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “বিচারপতিদের পরিবারের সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হলে বিচার বিভাগ কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে?”

তবে, কলেজিয়ামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সুপারিশ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে এবং সিজেআই গাভাই সংশ্লিষ্ট আলোচনা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।এই ঘটনা ভারতের বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্নকে সামনে এনেছে। বিশেষ করে, কলেজিয়াম ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে উঠছে।

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ সিং পূর্বে এই ব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই সুপারিশের পর ভবিষ্যতে কলেজিয়ামের কার্যপ্রণালী এবং বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আরও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অ্যাডভেঞ্চার বাইকের দামে বদল আনল বেনেলি, বিক্রিতে প্রভাব কতটা?

এই ঘটনা রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে এই সুপারিশ কীভাবে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং জনগণের আস্থার উপর প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।