নয়া দিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর: দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল একটি বড় ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি (Nepali Spy) মডিউলের পর্দাফাঁস করেছে এবং একজন নেপালি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতীয় সিম কার্ড পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর হাতে পৌঁছে দিয়েছিল, যা গুপ্তচরবৃত্তি এবং ভারতবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম প্রভাত কুমার চৌরাসিয়া (৪৩), যিনি নেপালের বীরগঞ্জের বাসিন্দা। তাকে গত ২৮ আগস্ট দিল্লির লক্ষ্মীনগরের বিজয় ব্লকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চৌরাসিয়া ভারতীয় সিম কার্ড সংগ্রহ করে নেপালের মাধ্যমে পাকিস্তানে পাচার করতেন, যেখানে এই সিম কার্ডগুলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ এবং গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ডেপুটি কমিশনার অমিত কৌশিক জানিয়েছেন, চৌরাসিয়া ২০২৪ সালে একজন নেপালি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আইএসআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাকে মার্কিন ভিসা এবং বিদেশে সাংবাদিকতার সুযোগের প্রলোভন দেখানো হয়।
এই প্রলোভনের বিনিময়ে তিনি ভারতীয় সিম কার্ড সরবরাহ এবং ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন) ও সেনাবাহিনীর সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের কাজে সম্মত হন।
তিনি মহারাষ্ট্রের লাতুরে নিবন্ধিত তাঁর আধার কার্ড ব্যবহার করে বিহার এবং মহারাষ্ট্রের টেলিকম দোকান থেকে কমপক্ষে ১৬টি সিম কার্ড সংগ্রহ করেন। এই সিম কার্ডগুলো সক্রিয় করার পর নেপালে পাচার করা হয় এবং সেখান থেকে পাকিস্তানের আইএসআই হ্যান্ডলারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১টি সিম কার্ড পাকিস্তানের লাহোর, বাহাওয়ালপুর এবং অন্যান্য এলাকায় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সক্রিয় ছিল।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, এই সিম কার্ডগুলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। গ্রেফতারের সময় চৌরাসিয়ার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ডিভাইস এবং সিম কার্ডের খালি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়, যেখানে অপরাধমূলক তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি জানিয়েছেন, তাঁর আর্থিক সংকট এবং বিদেশে পাড়ি দেওয়ার তীব্র ইচ্ছার কারণে তিনি আইএসআই-এর প্রলোভনে পড়েন। চৌরাসিয়া নেপালে এবং বিহারে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং এরিয়া সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১৭ সালে তিনি কাঠমান্ডুতে একটি লজিস্টিকস কোম্পানি চালু করেন, কিন্তু আর্থিক ক্ষতির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।দিল্লি পুলিশ চৌরাসিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ধারা ৬১(২) (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ধারা ১৫২ এর অধীনে মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত এখনও চলছে, এবং চৌরাসিয়ার সহযোগীদের শনাক্ত করা, কুরিয়ার নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা এবং বিদেশি হ্যান্ডলারদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।
তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, নেপালের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এই গুপ্তচরবৃত্তির মডিউলে জড়িত থাকতে পারেন, যিনি নাকি নেপালের জেনারেশন জি-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সঙ্গেও যুক্ত।এই গ্রেপ্তারি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। পাকিস্তানের আইএসআই বারবার ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টা করেছে, কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ধরনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
এশিয়া কাপে IND vs UAE ম্যাচ ফ্ৰি’তে কোথায় দেখেবন? জেনে নিন
চৌরাসিয়ার গ্রেফতারির মাধ্যমে আইএসআই-এর আরেকটি মডিউল ভেঙে পড়েছে। তবে, এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশেষ করে আধার কার্ডের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আগামী দিনে এই তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং আরও কোন কোন সহযোগী ধরা পড়ে, তা নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দৃষ্টি রয়েছে।