NEET Scam 2024: ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি) জাতীয় পর্যায়ে হওয়া মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষা NEET-UG ২০২৪-এ অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২৬ জন এমবিবিএস ছাত্রকে অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে ১৪ জন ছাত্রের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI)-এর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে।
জাতীয় যোগ্যতা ও প্রবেশিকা পরীক্ষা বা NEET, হলো একটি সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। প্রতিবছর লক্ষাধিক ছাত্র এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত NEET-UG পরীক্ষাকে ঘিরে একাধিক অভিযোগ উঠে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রযুক্তিগত জালিয়াতি এবং পরীক্ষায় অনৈতিক উপায় ব্যবহারের বিষয়ে। তদন্তে নেমে জাতীয় পরীক্ষার সংস্থা (NTA) অন্তত ৪২ জন পরীক্ষার্থীকে ২০২৪, ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য NEET-UG পরীক্ষায় বসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ ছাড়াও ৯ জন ছাত্রকে ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের পরীক্ষার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
CBI এই ঘটনাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করার পর, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তে উঠে আসে, ২৬ জন এমবিবিএস ছাত্র তাদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছে। জাতীয় চিকিৎসা কমিশনের এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছেন, “এই ছাত্রদের বিরুদ্ধের প্রমাণ হাতে আসার পর, দেশের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা রক্ষার স্বার্থে তাদের সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
একই সঙ্গে ১৪ জন ছাত্রের ভর্তি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারা NEET-UG পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল।
জাতীয় চিকিৎসা কমিশনের তরফে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই ছাত্রদের অবিলম্বে বরখাস্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে। কমিশন জানিয়েছে, “এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ গোটা মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়। একে কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।”
এনএমসি আরও জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত NEET-UG ২০২৫-এর পূর্ব মুহূর্তে নেওয়া হয়েছে, যাতে আগত পরীক্ষায় কোনো রকম অনৈতিক কার্যকলাপ রুখে দেওয়া যায় এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা বজায় থাকে। ২০২৫ সালের NEET-UG আগামী ৪ঠা মে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
তদন্তে প্রকাশ, বেশ কয়েকটি রাজ্যে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল এবং কিছু পরীক্ষার্থী প্রযুক্তিগত ডিভাইসের সাহায্যে উত্তর পেয়েছিল। এই ঘটনায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্মী, কোচিং সেন্টারের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।
জাতীয় পরীক্ষার সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন অনৈতিক ঘটনা রুখতে প্রযুক্তিগত নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে উন্নত সিসিটিভি নজরদারি, বায়োমেট্রিক যাচাই এবং র্যান্ডমাইজড প্রশ্নপত্র দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ছাত্র ও অভিভাবকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, কিছু ছাত্র দাবি করেছে তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। এ বিষয়ে CBI তদন্ত চলছে এবং প্রমাণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসা শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এমন দুর্নীতি ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য গভীর হুমকি। একজন শিক্ষার্থী যদি জালিয়াতির মাধ্যমে ডাক্তারি পড়ে, তবে তা গোটা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এনএমসি-এর এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন অনেকেই। চিকিৎসক মহল মনে করছে, “এই পদক্ষেপ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক বার্তা দেবে এবং আগামী দিনে কেউ এমন অনৈতিক পথে হাঁটার আগে একাধিকবার ভাববে।”
তদন্ত এখনো চলছে। প্রয়োজনে আরও ছাত্র বা প্রতিষ্ঠান এই অভিযানে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
NEET-UG ২০২৫-কে সামনে রেখে এনএমসি, NTA এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি এবারের পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।