বিহারে এনডিএ (NDA)-র বিপুল জয়ের পর রাজনৈতিক মহলের নজর এখন পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের দুই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর দিকে। প্রশ্ন উঠছে, বিহারের সেই সফল কৌশল কি বাংলায় বা তামিলনাড়ুতে কার্যকর হতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুই রাজ্যের বাস্তবতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো এতটাই আলাদা যে বিহারের মডেল কপি-পেস্ট করে সাফল্য পাওয়া কার্যত অসম্ভব।
পাটনার এ. এন. সিনহা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজের প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং সমাজ গবেষক ডি. এম. দিবাকর জানিয়েছেন, বিহারের রাজনৈতিক ময়দান বহুস্তরীয় ও বহুদলীয়। এখানে বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং জাতিভিত্তিক দল জোট গঠনের সুযোগ তৈরি করে। ক্রস-মোবিলাইজেশন, লক্ষ্যভিত্তিক কল্যাণমূলক বার্তা এবং বহু-খেলোয়াড়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এনডিএ-র জন্য সুবিধাজনক ছিল।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণ একেবারেই আলাদা। এখানে মূল লড়াই শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। বহু-দলীয় সুবিধা বা কৌশলগত জায়গা এখানে নেই। বাংলায় এনডিএ সরকারে নেই, ফলে বিহারের মতো দ্রুত ও সরাসরি কল্যাণমূলক প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ভোটার প্রভাবিত করার পথও নেই।
বিহারের নির্বাচনী সাফল্য মূলত নির্ভর করেছে জাতিভিত্তিক ভোট, মহিলাদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক প্রকল্প এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের সরাসরি উপকারে। কিন্তু বাংলায় জাতি-ভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক খুব বেশি দৃশ্যমান নয়। সেখানে রাজনৈতিক বক্তব্য ঘোরে পরিচয় রাজনীতি, অনুপ্রবেশ, নাগরিকত্ব বিল, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং তৃণমূল সরকারের কল্যাণমূলক নীতিকে ঘিরে।
তামিলনাড়ুর পরিস্থিতি আবার আরও আলাদা। এখানে ভাষা-ভিত্তিক পরিচয়, দ্রাবিড় রাজনীতি, হিন্দি-বিরোধী মনোভাব এবং আঞ্চলিক দলগুলোর শক্তিশালী অবস্থান বিজেপির জন্য বড় বাধা। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে বিহারের জাতি-কেন্দ্রিক মডেল প্রায় অপ্রাসঙ্গিক।
দিবাকর আরও বলেন, “বিহারে মহিলাদের লক্ষ্য করে নীতীশ কুমারের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প এনডিএ-কে বড় সুবিধা দিয়েছে। বাংলায় সেই জায়গায় তৃণমূল অনেক শক্ত অবস্থানে, আর তামিলনাড়ুতেও মহিলাদের লক্ষ্য করে ডিএমকে এআইএডিএমকের শক্তিশালী স্কিম রয়েছে।”
অন্যদিকে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোও বাংলায় এবং তামিলনাড়ুতে তুলনামূলক দুর্বল। ভাষার বাধা, আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ‘উত্তর ভারতীয় দল’-এর তকমা বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
অনেকেই মনে করছেন, বাংলায় তৃণমূলের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ এবং গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প মহিলাদের ও নিম্নবিত্তদের ভোট একত্রিত করেছে, যা বিহারের মতো মহিলাভিত্তিক কৌশলকে কার্যত অকার্যকর করে দেবে। তামিলনাড়ুতেও ডিএমকে-র ‘পুডুমাই পেন’ থেকে শুরু করে বহু মহিলাকেন্দ্রিক স্কিম বিজেপির পথ কঠিন করে তুলবে।
