ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ঘটল। জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (NCERT) সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে বিশেষ মডিউল প্রকাশ করেছে, যা পড়ানো হবে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। পাঠ্যসূচির বাইরে ‘সাপ্লিমেন্টারি রিডিং’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এই মডিউলগুলি। এর উদ্দেশ্য, দেশের ছোট থেকে বড় প্রজন্মের কাছে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের ইতিহাস, শহিদদের আত্মত্যাগ এবং শান্তির মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়া।
অপারেশন সিন্দুর মডিউল কী বলছে?
পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মডিউলে বলা হয়েছে, অপারেশন সিন্দুর শুধুমাত্র একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং শান্তি রক্ষা এবং নিরপরাধ মানুষের জীবনকে সম্মান জানানোর এক প্রতিশ্রুতি। এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের সরাসরি মদত ছিল। যদিও ইসলামাবাদ বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু এনসিইআরটির মডিউলে লেখা আছে— “এই হামলার নির্দেশ দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব।”
‘Operation Sindoor—A Saga of Valour’: পড়ানো হবে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের।
‘Operation Sindoor—A Mission of Honour and Bravery’: নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য।
এই পাঠ্যগুলিতে কেবল যুদ্ধ বা প্রতিশোধের কাহিনি নয়, বরং সাহস, দায়িত্ববোধ এবং শান্তি রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকার বৈসারণ উপত্যকায় জঙ্গিদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে প্রাণ হারান ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনা মে মাসে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে লক্ষ্যভেদী হামলা চালায়। কয়েক দিনের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় এবং দুই দেশ কার্যত পঞ্চম যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। তবে চার দিনের সংঘাতের পর উভয় দেশেই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
এনসিইআরটি জানিয়েছে, এই ধরনের মডিউল অন্তর্ভুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগানো, শহিদদের আত্মত্যাগের মূল্য বোঝানো এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান শেখানো। তবে সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট বয়সী ছাত্রছাত্রীদের জন্য যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের গল্প কীভাবে উপস্থাপিত হবে, তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
এর আগে এনসিইআরটি ‘Partition Horrors Remembrance Day’ উপলক্ষে একটি বিশেষ মডিউল প্রকাশ করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল— ভারতের বিভাজনের জন্য তিনজন ব্যক্তি দায়ী: “জিন্না, যিনি দাবী করেছিলেন; কংগ্রেস, যারা তা মেনে নিয়েছিল; এবং মাউন্টব্যাটেন, যিনি তা বাস্তবায়িত করেছিলেন।” এই বক্তব্য ঘিরেই শুরু হয় কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক।
অপারেশন সিন্দুর মডিউল প্রকাশের মধ্য দিয়ে আবারও পরিষ্কার হল, এনসিইআরটি এখন শুধু ইতিহাস নয়, সমকালীন ঘটনার প্রতিফলনও ছাত্রছাত্রীদের পাঠে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। একদিকে যেখানে এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও সাহসিকতার কাহিনি তুলে ধরে, অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও উসকে দিচ্ছে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশরক্ষার বাস্তব ইতিহাস ও শহিদদের সম্মান জানানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।