নিউজ ডেস্ক, নয়াদিল্লি: গত সপ্তাহে বিহারে অপহরণ করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে ২২ বছরের এক তরুণ সাংবাদিককে। ভারতে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভারতের সাংবাদিকদের (journalist) ওপর এ ধরনের ঘৃণ্য আক্রমণ নতুন কিছু নয়। বরং বলা যেতে পারে, নরেন্দ্র মোদি জমানায় এদেশে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ ক্রমশই বাড়ছে।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ (reporters without boders) নামে সাংবাদিকদের এক আন্তর্জাতিক সংগঠনের করা সমীক্ষায় ভারতীয় সাংবাদিকদের এই করুণ চিত্র ধরা পড়েছে। উল্লেখ্য, ১৬ নভেম্বর ভারতের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম দিবস। ঠিক সেই দিনেই রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্সের এই সমীক্ষা দেশকে নতুন করে লজ্জায় ফেলল।
মঙ্গলবার এই সংস্থা ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স (world press freedom index) প্রকাশ করেছে। এই আন্তর্জাতিক সংস্থা ১৮০টি দেশের উপর সমীক্ষা চালিয়েছে। ১৮০ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪২ নম্বরে। ওই সমীক্ষায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের জন্য ভারত এক ‘অত্যন্ত বিপদজনক’ (most dangerous) জায়গা। ওই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের তুলনায় প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশ অনেকটাই এগিয়ে আছে। যেমন নেপালের স্থান হয়েছে ১০৬। শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমার রয়েছে যথাক্রমে ১২৭ ও ১৪০ নম্বরে। ভারতের পিছনে রয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান ১৪৫ এবং বাংলাদেশ ১৫২ নম্বরে।
এই তালিকায় একেবারে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড সুইডেন এবং ডেনমার্ক। অন্যদিকে এই তালিকায় একেবারে শেষের চারটি দেশ হল যথাক্রমে চিন, তুর্কমেনিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং এরিট্রিয়া।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক (largest democratic country) দেশ ভারতে সাংবাদিকদের এই অবস্থা কেন তার উত্তরও দিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স নামে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।
তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতে মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি (bjp) সরকার গঠিত হওয়ার পর একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিজেপির সমর্থক এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমর্থকরাই সাংবাদিকদের জন্য ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকার বিরোধী কিংবা বিজেপি বিরোধী কোনও সংবাদ প্রকাশ হলেই সাংবাদিকদের গায়ে দেশবিরোধী তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সংবাদ মাধ্যমের উপর সর্বতোভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করে চলেছেন।
<
p style=”text-align: justify;”>ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ২০২০ সালে নিজেদের পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ভারতে ৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। যদিও ইউনেস্কোর দাবি, ভারতে ৬ জন সাংবাদিকের প্রাণ গিয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা ৪ বা ৬ যাই হোক না কেন এই তথ্য যে দেশের সম্মানের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জাজনক তা না বললেও চলে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিস্থিতিতে ভারতে সংবাদমাধ্যমকে কি আর গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা যেতে পারে!