মহারাষ্ট্রের নাগপুরের মহল এলাকায় সোমবার রাতে হিংসাত্মক সংঘর্ষের ঘটনায় মহারাষ্ট্র বিজেপি প্রধান ও মন্ত্রী চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় ১,০০০ জনের একটি উত্তেজিত জনতা বড় আকারে পাথর ছোঁড়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়, যাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হন এবং একাধিক গাড়ি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাওয়ানকুলে গুজব ছড়ানো রোধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে তদন্তের মাধ্যমে এই অশান্তির কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং গুজব থেকে দূরে রাখা। তদন্তের পর জানা যাবে কেন এই অশান্তি হল। নাগপুরের মানুষের গুজবে বিশ্বাস না করে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। পুলিশ শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছে। আমরা সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে এবং নাগপুর শহরের মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছি। মহারাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের একসঙ্গে এসে সমাজকে শান্তিপূর্ণ করার চেষ্টা করা উচিত এবং মানুষকে বোঝানো উচিত যে দাঙ্গাবাজদের পুলিশ শনাক্ত করবে। তবে এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া উচিত নয়।”
এই হিংসার প্রতিক্রিয়ায় নাগপুর পুলিশ শহরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং ২০ জনেরও বেশি লোককে আটক করেছে। কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্ত করছে এবং একটি এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে। পুলিশ জনগণকে শান্ত থাকতে এবং সহযোগিতা করতে বলেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র অতুল লন্ডে পাটিল হিংসার নিন্দা করেছেন এবং এর পিছনে একটি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “নাগপুরের মানুষের জন্য এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। নাগপুরে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা শীর্ষে রয়েছে। ভারতের অন্যত্র দাঙ্গা হলেও নাগপুরে কখনো এমনটা হয়নি। যারা রাজনৈতিক কারণে নাগপুরের শান্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে, আমি তার নিন্দা করছি। নাগপুরের মানুষের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, শান্তি বজায় রাখুন। যারা এই ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের পরাজিত করতে হবে, আর তার জন্য শান্তি রক্ষা করতে হবে।”
মহারাষ্ট্র কংগ্রেস সভাপতি হর্ষবর্ধন সপকাল এই হিংসাকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে স্বরাষ্ট্র বিভাগের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “নাগপুর শহরে রাতে পাথর ছোঁড়া ও অগ্নিসংযোগ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। নাগপুরবাসীদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাই। নাগপুরে সব ধর্মের মানুষ আনন্দে ও সুখে বাস করে। এটি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করির শহর। এমন উত্তেজনা, পাথর ছোঁড়া ও অগ্নিসংযোগ স্বরাষ্ট্র বিভাগের ব্যর্থতা। পুলিশের কাছে এর কোনো তথ্য ছিল না। গত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের মন্ত্রীরা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, আর নাগপুরে তা সফল হয়েছে।”
সপকাল আরও বলেন, “রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কৃষি সমস্যা ও সরকারের ঋণমাফির অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির মতো জ্বলন্ত প্রশ্ন রয়েছে। শাসক দল এ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে ক্রমাগত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। নাগপুর সমাজে সম্প্রীতির শহর। এখানে কখনো দাঙ্গা হয়নি। রামনবমীতে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে রথ টানে। তাজউদ্দিন বাবার দরগায় মুসলিমের চেয়ে হিন্দুরাই বেশি যায়।”
হিংসার শিকার ব্যক্তিরা বিশৃঙ্খলার বর্ণনা দিয়েছেন। সুনীল পেশনে, যার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, বলেন, “রাত ৮:৩০ নাগাদ ৫০০-১০০০ জনের জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। তারা আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। প্রায় ২৫-৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।”
এই ঘটনা নাগপুরের শান্তিপূর্ণ ইতিহাসে একটি দাগ ফেলেছে। রাজনৈতিক নেতারা যেখানে শান্তির আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে কেউ কেউ এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন। তদন্তের মাধ্যমে এর আসল কারণ উদঘাটনের অপেক্ষায় শহরবাসী।