Nagaland: কবরখানার মতো নিঝুম, রক্তাক্ত ওটিং গ্রামের রাস্তায় একলা স্যান্টাবুড়ো

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: “গ্রামখানি গৃহময়, কিন্তু লোক দেখি না।…মধ্যে মধ্যে উচ্চ নীচ অট্টালিকা। আজ সব নীরব। বাজারে দোকান বন্ধ, দোকানদার কোথায় পলাইয়াছে ঠিকানা নাই। আজ…” (সৌ: আনন্দমঠ)
আজ? আজ বড়দিন।

Advertisements

এমন উৎসবের দিনে কবরখানার নিঝুম ঠান্ডা ঘিরে রেখেছে নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিং গ্রামকে। এদিক ওদিক কিছু বেলুন হাওয়ায় দুলছে। গ্রামের মুখে স্যান্টাবুড়ো আছেন। তিনিও ঢুকতে সাহস পাননি। কারণ, ওটিং গ্রামে বড়দিন পালিত হবে না।

   

কয়েকদিন আগেই রক্তাক্ত হয়েছে এই গ্রাম। জঙ্গি সন্দেহে অসম রাইফেলস জওয়ানরা গুলি করে মারে ওটিং গ্রামের ১৪ জনকে। সবাই খনি শ্রমিক। সামনেই বড়দিন উপলক্ষে তখন ওটিং গ্রামে চলছিল প্রস্তুতি। গত ৩-৫ ডিসেম্বর ওটিং গ্রাম, উরি গ্রামের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে। অসম রাইফেলসের গুলি, গ্রামবাসীদের বিক্ষোভে পরপর রক্ষী ক্যাম্পে আগুন, ফের গুলি আরও একজনের মৃত্যু, জনতার রোষে এক জওয়ানের মৃত্যু সবই হয়েছে।

নাগাভূমির ওটিং গ্রাম ততক্ষণে বিশ্বজুড়ে আলোচিত। সেই ভয়াবহ তারিখগুলো পেরিয়ে পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFSPA) বাতিল দাবি সরকারিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ক্ষোভে দুঃখে সরকারি ক্ষতিপূরণ ফিরিয়েছেন ওটিংবাসী।

সার সার দেহ সমাধিস্থ হয় এই গ্রামেই। ভয়াবহ করুণ এই দৃশ্য গোটা দেশকে নড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বড়দিন ব্রাত্য ওটিং গ্রামে। পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে চলেছে বিক্ষোভ।

শনিবার বড়দিন পালনে নামমাত্র কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে দেবেন উরি-ওটিং গ্রামের বাসিন্দারা। চার্চে প্রার্থনা হবে। ব্যাস এইটুকুই। কালো বড়দিন পালিত হবে নাগাভূমির মন জেলায়।

Advertisements

ওটিং গ্রামের ঘরে ঘরে নিহতদের স্মরণে চাপা কান্না। থেকে থেকে চোয়াল শক্ত হয়েছে। নাগা জাতির সর্বব্যাপী সংগঠন নাগা হো হো জারি করেছে সেনাবাহিনী ও অসম রাইফেলসের সঙ্গে সবরকম অসহযোগিতার নির্দেশ। বৃহত্তর নাগা সম্প্রদায় কন্যাক গোষ্ঠির তরফে উত্তর পূর্বের নাগা অধ্যুষিত এলাকায় বার্তা গেছে, আফস্পা আইন বাতিলে বৃহত্তর সংগ্রাম শুরু হবে।

নাগাল্যান্ড সরকার চিন্তিত। মন জেলায় জারি করা হয়েছে নৈশকালীন কার্ফু নিয়ম। সশস্ত্র নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির তরফে এসেছে প্রত্যাঘাতের হুমকি।

খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগুরু অংশ বসবাস করেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়ে। বিভিন্ন উপজাতি জনজীবনের মধ্যে পারস্পরিক বৈরিভাব থাকলেও সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (AFPSA) প্রয়োগ বাতিলে সবাই একাট্টা। এবারের বড়দিনের উৎসবকে কালো উৎসব চিহ্নিত করে আইনটি বাতিলের দাবিতে উত্তর পূর্বের রাজনৈতিক মহল গরম হচ্ছে।

<

p style=”text-align: justify;”>নাগাভূমির সর্বত্র বলা হচ্ছে ‘অমিত শাহ মিথ্যেবাদী’। কোহিমা, ডিমাপুরে জনসমাবেশ থেকে ক্রমাগত উঠছে আফস্পা বিরোধী স্লোগান।