শুক্রবার, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা (nadda) দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্বাস্থ্য সুবিধাগুলির পর্যালোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাস্থ্য সুবিধাগুলির বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করেন।
বৈঠকের বিষয়বস্তু (nadda)
বৈঠকে নাড্ডাকে (nadda) সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সুবিধার কার্যক্রমের অবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে জানানো হয়, যেখানে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বৈঠকটি পাকিস্তানের প্রতিশোধমূলক প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হয়েছে (nadda) , যা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটেছে। এই অপারেশনে গত বুধবার পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে করা হয়েছিল।
রাজনাথ সিং র বৈঠক
একই দিনে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজধানীতে দক্ষিণ ব্লকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। পাকিস্তানের বড় মাপের ড্রোন হামলা ব্যর্থ হওয়ার পর এই পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সিং-এর সঙ্গে ছিলেন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যার মধ্যে ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আমর প্রীত সিং এবং প্রতিরক্ষা সচিব আরকে সিং।
এদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ৮ ও ৯ মে রাতে পশ্চিম সীমান্ত এবং জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তানের একাধিক ড্রোন হামলা সফলভাবে প্রতিহত ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ৮ ও ৯ মে রাতে পশ্চিম সীমান্তের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক হামলা চালায়।
পাক সেনারা এলওসি বরাবর অসংখ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনও করেছে
পাক সেনারা এলওসি বরাবর অসংখ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনও করেছে। ড্রোন হামলাগুলো কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জাতির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমস্ত কুটিল পরিকল্পনার জবাব বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দেওয়া হবে।”
পাহালগাম হামলা ও অপারেশন সিঁদুর
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে একটি ভয়াবহ এনং নৃশংস জঙ্গি হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। এই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা’র একটি প্রক্সি গ্রুপ কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে দায়ী করেছে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা’র নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলা চালানো হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই অপারেশনকে “অসাধারণ নির্ভুলতার” সঙ্গে সম্পন্ন বলে প্রশংসা করেছেন, এবং জানিয়েছেন যে এতে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
গোল্ডেন জুবিলিতে আজ ভারত-শ্রীলঙ্কা U19 ফুটবল মহারণ
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতি
নাড্ডার (nadda) নেতৃত্বে পরিচালিত বৈঠকে দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর প্রস্তুতি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতার উপর জোর দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে সমস্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সুবিধার উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ চলছে।
এই পদক্ষেপটি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং জনবল দিয়ে সজ্জিত রয়েছে কিনা।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর পর্যালোচনা বৈঠকে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ড্রোন হামলা এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তানের হামলাগুলো উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেছিল, যার মধ্যে ছিল আওয়ান্তিপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, আমৃতসর, জালন্ধর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড়, ভটিন্ডা, ফালোদি, উত্তরলাই এবং ভুজ। এই হামলাগুলো ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পাল্টা হামলার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ১২ জন বেসামরিক নাগরিক ও একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন। ভারত সরকার এই ঘটনাকে “অযৌক্তিক এবং নির্বিচারে” হামলা হিসেবে নিন্দা করেছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাধি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর তাদের নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কাতার, স্পেন, ইরান, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার এই সংকটময় মুহূর্তে ভারত সরকার তার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার (nadda) পর্যালোচনা বৈঠক এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর নিরাপত্তা পর্যালোচনা দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিশ্চিত করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, এবং দেশের জনগণকে একত্রিত হয়ে এই সংকট মোকাবিলার আহ্বান জানানো হয়েছে।