জনপ্রিয় ই-কমার্স সংস্থা মাইন্ট্রা ডিজাইনস প্রাইভেট লিমিটেড (Myntra Designs Pvt. Ltd.)-এর বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিল প্রবर्तन নির্দেশালয় (Enforcement Directorate বা ED)। সংস্থার বিরুদ্ধে বিদেশি বিনিময় ব্যবস্থাপনা আইন, ১৯৯৯ (Foreign Exchange Management Act বা FEMA) লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রায় ১৬৫৪ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ইডি।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, মাইন্ট্রা ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে FEMA-এর ধারা ১৬(৩) অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই সংস্থাগুলি তথাকথিত পাইকারি (wholesale) ব্যবসার আড়ালে মাল্টি-ব্র্যান্ড রিটেইল ট্রেড (multi-brand retail trading)-এ যুক্ত ছিল, যা ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) নীতির বিরোধী।
অভিযোগের মূল বিষয়বস্তু:
ইডি’র বক্তব্য অনুযায়ী, মাইন্ট্রা তাদের অধিকাংশ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করছিল একটি সহযোগী সংস্থা ভেক্টর ই-কমার্স প্রাইভেট লিমিটেড (Vector E-Commerce Pvt. Ltd.)-এর মাধ্যমে। এই ভেক্টর নামের সংস্থাটি একই কর্পোরেট গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং সরাসরি গ্রাহকদের (end consumers) কাছে পণ্য বিক্রি করছিল।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, ভেক্টর ই-কমার্সকে ইচ্ছাকৃতভাবে গঠন করা হয়েছিল যেন পাইকারি ব্যবসার আড়ালে আসলে খুচরো (retail) ব্যবসা চালানো যায়। এইভাবে, বিদেশি অর্থায়িত সংস্থা হিসেবে মাইন্ট্রা ভারতের FDI নীতির বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে মাল্টি-ব্র্যান্ড রিটেইল ব্যবসা করছিল। উল্লেখ্য, ভারতের বর্তমান FDI নীতিতে বিদেশি অর্থায়িত সংস্থাগুলিকে মাল্টি-ব্র্যান্ড রিটেইল ট্রেডে সরাসরি অংশগ্রহণের অনুমতি নেই।
প্রতারণার কাঠামো: ব্যবসার নামে ছলচাতুরি?
মাইন্ট্রা এবং ভেক্টরের মধ্যে গঠিত এই ব্যবসায়িক কাঠামো কতটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং কীভাবে তারা আইনকে পাশ কাটিয়ে চলছিল, সেটিই ইডি এখন খতিয়ে দেখছে। সংস্থাটি মনে করছে, এই মডেলকে পাইকারি ব্যবসা হিসেবে দেখানোর মাধ্যমে তারা বিদেশি বিনিয়োগের নিয়মাবলিকে ভুলভাবে ব্যবহার করেছে।
ইডি’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, মোট ১৬৫৪.৩৫ কোটি টাকার অদৃশ্য ও অনিয়ন্ত্রিত লেনদেন হয়েছে মাইন্ট্রার মাধ্যমে, যা সরাসরি ফেমা আইন লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। তদন্তের অংশ হিসেবে, এই বিপুল পরিমাণ লেনদেন কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে, এবং কতটা বিদেশি মূলধনের ব্যবহার হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বড় ধরনের নজির তৈরি করতে চলেছে তদন্ত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইডির এই তদন্ত ভবিষ্যতে ভারতের ই-কমার্স ক্ষেত্রের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এফডিআই নীতির “গ্রে এরিয়া” (regulatory grey zones) নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, বিশেষত ই-কমার্স সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে। মাইন্ট্রার বিরুদ্ধে এই মামলা সেই বিষয়টিকে প্রকাশ্যে এনে দিল।
তদন্তের অগ্রগতি ও সম্ভাব্য শাস্তির পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রমাণিত হলে, মাইন্ট্রা এবং তাদের ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে জরিমানা ছাড়াও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমনকি তাদের লাইসেন্স বাতিল, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ, কিংবা সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে।
মাইন্ট্রার প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি:
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাইন্ট্রার তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে সংস্থাটি ভবিষ্যতে তদন্তে সহযোগিতা করবে কি না, বা তারা অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিরক্ষা প্রস্তুত করছে কি না, তা নিয়ে নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
ই-কমার্সের নীতিতে আরও কঠোরতা আসতে পারে:
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ই-কমার্স নীতিমালায় আরও স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রণ আনার সম্ভাবনা প্রবল। ইতিপূর্বে ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন সহ একাধিক ই-কমার্স সংস্থার বিরুদ্ধেও FDI নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এখন মাইন্ট্রার বিরুদ্ধে সরাসরি ফেমা আইনে মামলা হওয়ায় গোটা ই-কমার্স ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বাড়ানো হতে পারে।
মাইন্ট্রার বিরুদ্ধে ইডির তদন্ত ভারতের ই-কমার্স শিল্পে একটি বড় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার ও আইন মেনে ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা এখন আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। ফেমা আইনের মতো কঠিন আইন প্রয়োগ করে ইডি যে কোনো ধরণের আইনি ফাঁকফোকরকে আর ছাড় দিতে রাজি নয়, এই তদন্ত সেই বার্তাই দিচ্ছে।