রাস্তার কুকুরের আক্রমণে ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার মধ্যপ্রদেশে

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ভিস্তি মোহল্লায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে (Stray Dog)। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধের অর্ধ-পচনশীল দেহ তাঁর জরাজীর্ণ বাড়ি থেকে উদ্ধার…

Stray Dog beaten to death

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ভিস্তি মোহল্লায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে (Stray Dog)। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধের অর্ধ-পচনশীল দেহ তাঁর জরাজীর্ণ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিবেশী এবং আত্মীয়রা দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করার পর দেখেন, রাস্তার কুকুরগুলি বৃদ্ধের দেহকে ক্ষতবিক্ষত করছে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে শোক এবং আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং একাকী বসবাসকারী বৃদ্ধদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

মৃত ব্যক্তির পরিচয় বিজেন্দ্র সিং হিসেবে নিশ্চিত হয়েছে, যিনি ভিস্তি মোহল্লার বাসিন্দা ছিলেন। বিজেন্দ্র একা থাকতেন এবং তাঁর দুটি বিবাহ হয়েছিল, কিন্তু উভয় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। প্রতিবেশীদের মতে, গত দুদিন ধরে তাঁকে দেখা যায়নি, কিন্তু কেউই ভাবেননি যে তাঁর বাড়ির ভেতর এমন ভয়াবহ দৃশ্য চলছে।

   

বিজেন্দ্রর ভাইপো বাড়িতে এসে দুর্গন্ধ পাওয়ার পর দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন এবং এই মর্মান্তিক দৃশ্যের মুখোমুখি হন। তিনি দেখেন, রাস্তার কুকুরগুলি বিজেন্দ্রর দেহের একটি হাত এবং একটি পা খেয়ে ফেলেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল, যার ফলে কুকুরগুলি সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পেরেছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ তৎক্ষণাৎ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়, যাতে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা যায়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে বিজেন্দ্র সিংয়ের মৃত্যু প্রাকৃতিক কারণে বা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় হয়ে থাকতে পারে, এবং তারপর কুকুরগুলি তাঁর দেহের উপর আক্রমণ করে। তবে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করা যায়নি।

এই ঘটনা ইন্দোরে রাস্তার কুকুরের সমস্যার গুরুতরতা তুলে ধরেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ইন্দোরের হুকুমচাঁদ হাসপাতালে প্রায় ২৪,০০০ কুকুরের কামড়ের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও র‍্যাবিসের কোনো ঘটনা রিপোর্ট হয়নি এবং প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে অ্যান্টি-র‍্যাবিস চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তবুও এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ইন্দোরে রাস্তার কুকুরের আক্রমণের ঘটনা এই প্রথম নয়। গত জুলাই মাসে শ্রী নগর এক্সটেনশন এলাকায় এক কলেজ ছাত্রীকে চারটি কুকুর আক্রমণ করে গুরুতরভাবে আহত করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, কুকুরগুলি প্রথমে ছাত্রীকে ধাওয়া করে এবং পরে তাকে মাটিতে ফেলে কামড়ায়।

এছাড়া, মোতিতবেলা এলাকায় তিনটি শিশুকে কুকুরের আক্রমণে গুরুতর আহত হতে হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও ভয়ের সঞ্চার করেছে।

Advertisements

ইন্দোর পৌরসংস্থার (আইএমসি) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা রাস্তার কুকুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ২০০১ সালের পশু জন্ম নিয়ন্ত্রণ (এবিসি) নিয়ম অনুসারে, রাস্তার কুকুরদের হত্যা করা যায় না, শুধুমাত্র তাদের জীবাণুমুক্ত করা যায়। কিন্তু পৌরসংস্থাগুলির কাছে এই প্রক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব রয়েছে, যার ফলে কুকুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খাদ্য বর্জ্য অপসারণে অবহেলার কারণে রাস্তার কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক কর্মী দানিশ খান বলেন, “প্রতিদিন রাস্তায় কুকুরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। শিশু এবং বৃদ্ধরা এই আক্রমণের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে। পৌরসংস্থার উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”

এই ঘটনা একাকী বসবাসকারী বৃদ্ধদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে। বিজেন্দ্র সিংয়ের মতো বহু বৃদ্ধ একা থাকেন, এবং তাঁদের নিয়মিত দেখভালের জন্য কেউ থাকে না। এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, যাতে রাস্তার কুকুরের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি একাকী বৃদ্ধদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

তোলপাড় ক্রিকেটদুনিয়া, হটাৎ কী হল? ‘হিটম্যান’কে তলব করল BCCI

এই ঘটনা ভারতের শহরাঞ্চলে রাস্তার কুকুরের সমস্যার গভীরতা এবং একাকী বৃদ্ধদের জন্য সুরক্ষার অভাবকে তুলে ধরেছে। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি দিল্লি পৌরসংস্থাকে রাস্তার কুকুরদের আশ্রয়ে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু এই সমস্যার সমাধানে আরও ব্যাপক এবং কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।