হিন্দুদের উপর পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদের

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার (Murshidabad Violence) ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা (Shehzad Poonawalla)। তিনি…

BJP’s Shehzad Poonawalla Blames Mamata Govt for Targeted Attacks on Hindus

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসার (Murshidabad Violence) ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা (Shehzad Poonawalla)। তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি এবং প্রশ্রয়ের ফলে এই সহিংসতা ঘটছে, যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু করে পরিচালিত হচ্ছে।

পুনাওয়ালার মতে, “বাংলা জ্বলছে, আর এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার সম্পূর্ণরূপে দায়ী। এটি রাষ্ট্র-প্রযোজিত, রাষ্ট্র-সুরক্ষিত এবং রাষ্ট্র-উৎসাহিত সহিংসতা, যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেছেন, এই ঘটনার ফলে হিন্দুদের উপর নানা অত্যাচার চলছে, তাদের বাড়িঘর ও দোকানে আগুন দেওয়া হচ্ছে, এমনকি তাদের মন্দিরের মূর্তি ভাঙা হচ্ছে। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভূমিতে এমন ঘটনা ঘটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লজ্জিত হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

‘হিন্দুদের উপর নির্বাচিত হামলা’

শেহজাদ পুনাওয়ালা আরও জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের বাড়িঘর এবং দোকান নির্বাচিতভাবে লক্ষ্য করে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই সহিংসতার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি মন্দিরে থাকা মূর্তি ভাঙা এবং ভগবা পতাকা নামিয়ে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর মতে, এই ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ ভাঙনের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “যে ভূমিতে স্বামী বিবেকানন্দের মতো মহান ব্যক্তিত্ব জন্মেছেন, সেখানে এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তুষ্টিকরণের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, যা লজ্জাজনক।”

মুর্শিদাবাদে অশান্তির পটভূমি

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের প্রতিবাদের নামে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ও বিএসএফের গাড়িতে হামলা, সম্পত্তি ভাঙচুর এবং পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতেও হিজলতলায় বিএসএফের গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, যা এলাকার পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। পুলিশ এবং বিএসএফ যৌথভাবে এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং কোনও জমায়েত দেখলেই তা হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অশান্তির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় একদিনে ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছে।

বিজেপির অভিযোগ: রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা

পুনাওয়ালা অভিযোগ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এই সহিংসতা রোধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “এই সহিংসতা রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে ঘটছে। হিন্দুদের উপর নির্বাচিতভাবে হামলা করা হচ্ছে, তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছে। এমনকি তাদের ধর্মীয় প্রতীকের উপরও আঘাত হানা হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেছেন, রাজ্য সরকারের তুষ্টিকরণ নীতি এই ধরনের ঘটনাকে উৎসাহিত করছে। তাঁর মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

Advertisements

এলাকার পরিস্থিতি ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনার পর পুলিশ ও বিএসএফের তরফে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল করণি সিং সেখাওয়াত সামশেরগঞ্জে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের প্রয়োজন অনুযায়ী বিএসএফ এলাকায় মোতায়েন থাকবে এবং কোনও বিশৃঙ্খলাকে বরদাস্ত করা হবে না। এলাকায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF)-এর সঙ্গে পুলিশের টহল চলছে। ধুলিয়ান পৌরসভা এবং পাশের গ্রামগুলিতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও আতঙ্কিত এবং শান্তি ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজেপির পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান এবং ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই তাণ্ডবের পিছনে বহিরাগত দুষ্কৃতিরা জড়িত। তাঁরা পুলিশের কাছে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে, বিজেপির মুখপাত্র পুনাওয়ালার অভিযোগে রাজ্য সরকারের নীতির প্রতি সরাসরি আঙুল তোলা হয়েছে।

মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালার তীব্র সমালোচনা এবং মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তুষ্টিকরণের অভিযোগ এই ঘটনার গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। পুলিশ ও বিএসএফের তৎপরতা সত্ত্বেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ এবং সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সকলের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।