অসমের শিলচরে একটি ঘটনা সাম্প্রদায়িক সংহতির উপর প্রশ্ন তুলে ধরেছে। মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা মুহাম্মদ মইনুর ইসলাম নামে একজন ব্যক্তি সজল দাস নামের একটি মিথ্যা পরিচয় গ্রহণ করে একজন হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছিলেন, যা এখন তাঁর জন্য এক বড় বিপদের সূত্রপাত হয়েছে। এই ঘটনাটি “লাভ জিহাদ” (Love Jihad) নামক একটি বিবাদিত বিষয়ের মধ্যে ফেলে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণ হয়ে উঠেছে।
মুহাম্মদ মইনুর ইসলাম শিলচর শহরে বসবাস ও কাজ করতেন, কিন্তু তিনি তাঁর সত্যিকারের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি সজল দাস নামে পরিচয় দিয়ে চঞ্চলা দাস নামে একজন হিন্দু নারীকে প্রেমের জালে আটকিয়ে বিয়ে করেন। কয়েকদিন আগে চঞ্চলা দাস আবিষ্কার করেন যে তাঁর স্বামী আসলে হিন্দু নন, বরং একজন মুসলিম। এই সত্য জানার পর তিনি তাঁর প্রতিবেশীদের এ বিষয়ে জানান, যার ফলে স্থানীয় লোকজন রেগে উঠে মইনুর ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করে এবং তাঁকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নেয়।
Also Read | কাশ্মীরে সিপিএম সংগঠনে ধস, ‘ভূস্বর্গের লালকেল্লা’ কুলগামের পতন আশঙ্কা
চঞ্চলা দাসের বক্তব্য অনুসারে, তিনি সজল দাস নামে পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে আটকানো হয়েছিল। এমনকি সজল দাস হিসেবে মিথ্যা দলিলও দেখানো হয়েছিল। এই ঘটনাটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং “লাভ জিহাদ” নামক অভিযোগের উপর নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
“লাভ জিহাদ” একটি বিবাদিত শব্দ যা কিছু সংগঠন ও রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে তাঁরা দাবি করেন যে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে তাঁদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে। এই ধরনের ঘটনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণ হয়ে উঠেছে। অসমেও এই ধরনের ঘটনা বিরল নয়, কিন্তু এই ঘটনাটি বিশেষ করে তীব্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে কারণ এটি একটি শহরী অঞ্চলে ঘটেছে এবং স্থানীয় লোকজনের প্রতিক্রিয়া খুবই তীব্র হয়েছে।
পুলিশ এই ঘটনার উপর তদন্ত শুরু করেছে এবং মইনুর ইসলামকে গ্রেফতার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারার আইনের অধীন মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ধোঁকাবাজি, ধর্মীয় অনুভূতি আহত করা এবং অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত। এই ঘটনাটি স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং এর ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যেখানে ধর্মীয় সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিষয়টি সংবেদনশীল। কার্নাটকের মতো কিছু রাজ্যে এই ধরনের ঘটনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য বিধানসভায় বিভিন্ন আইন প্রস্তাবিত হয়েছে, যদিও সবগুলোই বাস্তবায়ন হয়নি। অসমেও এই ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকলে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়তে পারে।
এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে ধর্মীয় সংহতি ও মিথ্যা পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে তোলা সমাজের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সংহতি বজায় রাখার জন্য সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা কমে।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র অসমের শিলচরে নয়, বরং পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে “লাভ জিহাদ” নামক অভিযোগের উপর নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক সংহতি বজায় রাখার জন্য সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা কমে।