মুম্বই ট্রেন দুর্ঘটনায় নড়েচড়ে বসে লোকাল ট্রেন তৈরিতে বড় সিদ্ধান্ত

মুম্বই (mumbai) শহরতলির লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। থানে জেলার দিভা এবং কোপার রেল স্টেশনের মধ্যে একটি…

mumbai train accedent

মুম্বই (mumbai) শহরতলির লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। থানে জেলার দিভা এবং কোপার রেল স্টেশনের মধ্যে একটি ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেন থেকে যাত্রী পড়ে যাওয়ার ঘটনায় চারজনের মৃত্যু এবং ছয়জন আহত হওয়ার পর, রেল মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে মুম্বই শহরতলির সমস্ত বিদ্যমান এবং নতুন লোকাল ট্রেনের কোচে স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে।

রেল বোর্ডের তথ্য ও প্রচার বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দিলীপ কুমার জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের (mumbai) এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “মুম্বই শহরতলির জন্য যে সমস্ত ট্রেন তৈরি হচ্ছে, সেগুলোতে স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও, বর্তমানে চলমান সমস্ত রেক পুনরায় ডিজাইন করা হবে এবং এই রেকগুলোতে দরজা বন্ধের ব্যবস্থা প্রদান করা হবে।”

   

রেল কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, যাত্রীদের (mumbai)নিরাপত্তা রেলের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে দিভা এবং কোপার রেল স্টেশনের মধ্যে, যখন একটি ট্রেন কাসারার দিকে যাচ্ছিল।

রেল কর্মকর্তাদের মতে, দুটি ভিড়ে ঠাসা ট্রেন বিপরীত দিকে যাওয়ার সময় ফুটবোর্ডে ঝুলে থাকা যাত্রীদের ব্যাকপ্যাক পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ায় সম্ভবত যাত্রীরা পড়ে যান। তবে, মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেননি কর্মকর্তারা। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস বলেছেন, রেল প্রশাসন এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে।

দুর্ঘটনার বিবরণ (mumbai)

ঘটনাটি সোমবার সকাল ৯:৩০ টায় দিভা-মুম্বরা এলাকায় ঘটে, যখন ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস (সিএসএমটি) থেকে কাসারাগামী একটি ট্রেন চলছিল। (mumbai)কেন্দ্রীয় রেলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রেনটি অত্যন্ত ভিড়ে ঠাসা ছিল এবং অনেক যাত্রী দরজার কাছে ফুটবোর্ডে ঝুলছিলেন।

বিপরীত দিকে যাওয়া আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে এই ট্রেনটি পাশাপাশি যাওয়ার সময় ফুটবোর্ডে থাকা যাত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খান, ফলে ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে যান। এই ঘটনায় চারজন মারা যান এবং ছয়জন আহত হন। আহতদের নিকটবর্তী ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ হাসপাতাল এবং জুপিটার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় রেলের প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক স্বপ্নিল ধনরাজ নীলা স্পষ্ট করেছেন, “এটি কোনও ট্রেনের সংঘর্ষ ছিল না। বিপরীত দিকে চলা দুটি ট্রেনের ফুটবোর্ডে থাকা যাত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং ভারসাম্য হারান।” তিনি জানান, ট্রেনগুলোর মধ্যে সাধারণত ১.৫ থেকে ২ মিটার দূরত্ব থাকে, তবে বাঁকানো পথে ট্রেনের ঝুঁকে পড়ার কারণে এই দূরত্ব কমে যেতে পারে।

স্বয়ংক্রিয় দরজার গুরুত্ব

মুম্বইয়ের (mumbai) লোকাল ট্রেন, যা শহরের জীবনরেখা হিসেবে পরিচিত, প্রতিদিন ৭৫ লক্ষেরও বেশি যাত্রী বহন করে। ভিড়ের সময় ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় হয়, যার ফলে অনেক যাত্রী ফুটবোর্ডে ঝুলে ভ্রমণ করেন। এই অভ্যাসটি দীর্ঘদিন ধরে দুর্ঘটনার একটি প্রধান কারণ। ২০০৫ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মুম্বই শহরতলির রেল নেটওয়ার্কে ৫১,৮০২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে থানে, কল্যাণ, বসই এবং বোরিভলি স্টেশনগুলোতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় (mumbai) দরজা বন্ধের ব্যবস্থা এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রেল বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের ফলে নতুন ট্রেনগুলোতে এই ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে এবং বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে পুনরায় ডিজাইনের মাধ্যমে এই সুবিধা যুক্ত করা হবে। তবে, এই ধরনের প্রযুক্তি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ আগেও দেখা গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পশ্চিম রেলওয়ে তিনটি নন-এসি কোচে স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধের ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু ভিড়ের সময় কোচের ভিতরে শ্বাসরোধের মতো পরিস্থিতির কারণে এই প্রকল্প বাতিল করা হয়।

Advertisements

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এনসিপি (এসপি) নেতা শরদ পাওয়ার বলেছেন, কেন্দ্রীয় রেলওয়েকে ট্রেনের সময়সূচী সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “স্বয়ংক্রিয় দরজা স্থাপনের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।” তিনি আহত যাত্রীদের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন এবং মৃতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।

এনসিপি (এসপি) নেত্রী বিদ্যা চাভান বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং রেল মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে বলেন, “সরকার যাত্রীদের মৌলিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে আমরা ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে প্রচার করি, কিন্তু মানুষ এখনও মৌলিক সুবিধার জন্য সংগ্রাম করছে।”

শিবসেনা (mumbai) সাংসদ নরেশ মাস্কে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যাত্রীরা কীভাবে পড়লেন, ভিড়ের কারণে নাকি ধাক্কাধাক্কি বা ঝগড়ার জন্য, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

এই চিনা জেটটি নামে মাত্র একটি ‘ফাইটার’, ৫০% দামে কিনলেও ১০০% ক্ষতি হবে পাকিস্তানের

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

মুম্বই (mumbai) শহরতলির রেল নেটওয়ার্কে প্রতিদিন ৪০ লক্ষ যাত্রী ভ্রমণ করে কেন্দ্রীয় রেলের ১,৮১০টি পরিষেবায়। এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধের ব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ট্র্যাকের পাশে বেআইনি অবকাঠামো অপসারণ, প্ল্যাটফর্মের শেষে ফেন্সিং এবং যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। এই ঘটনা মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে।