ভারতীয় সেনার সাহসিকতার প্রতীক কর্নেল সোফিয়া কুরেশির (Sofia Qureshi) ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বড়সড় বিতর্কের মুখে পড়েছেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী বিজয় শাহ। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। আদালতের এই রায়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বিজেপি এখন চাপের মুখে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ৭ মে, যখন ভারতীয় সেনা পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রত্যুত্তরে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। এই নিখুঁত এবং পরিকল্পিত হামলাকে নাম দেওয়া হয় অপারেশন ‘সিঁদুর’। এই অভিযানের সাফল্যের পর সাংবাদিক বৈঠকে গোটা দেশবাসীর সামনে সেই অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। দুই নারী আধিকারিকের এই নেতৃত্ব দেশের নারীশক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে এবং একাধারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও বার্তা দেয় বিশ্বমঞ্চে।
এই সময়েই কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ঘিরে ধর্মীয় বিভাজনমূলক মন্তব্য করে বসেন মধ্যপ্রদেশের বনমন্ত্রী বিজয় শাহ। তিনি সোফিয়ার ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে এমন বক্তব্য রাখেন, যা অনেকের চোখে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে। এই মন্তব্য দ্রুত ভাইরাল হয় এবং নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র।
বিজয় শাহের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। শুনানি শেষে আদালত জানায়, একজন সরকারি মন্ত্রীর এমন উস্কানিমূলক মন্তব্য শুধু সমাজে বিভাজন তৈরি করে না, বরং তা সংবিধানবিরোধী। আদালত তাই পুলিশকে নির্দেশ দেয়, বিজয় শাহের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করতে হবে।
এদিকে বিরোধী দল কংগ্রেস এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্রদের দাবি, এমন মন্তব্য প্রমাণ করে বিজেপি সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা কতটা গভীরে প্রোথিত। সেইসঙ্গে তাঁরা বিজয় শাহের অবিলম্বে পদত্যাগ ও গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি দেশসেবায় নিয়োজিত একজন সাহসী সেনা কর্মকর্তা। তাঁর ধর্ম নয়, তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠাই দেশের গর্বের বিষয়। সেনাবাহিনীতে নারী ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের ভূমিকা আজ আরও স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ আরও বেশি প্রত্যাশিত।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিচারব্যবস্থা ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন যদি সঠিক পথে চলে, তবে তা সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে—সাম্প্রদায়িকতা নয়, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমই আসল পরিচয়।