দশমীতে ভারতের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ভাগবতের

নাগপুরে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী উপলক্ষে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান মোহন ভাগবত এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। সেখানে তিনি প্রতিবেশী দেশগুলির রাজনৈতিক অস্থিরতা,…

Mohan Bhagwat Vijaya Dashami

নাগপুরে বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী উপলক্ষে আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান মোহন ভাগবত এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। সেখানে তিনি প্রতিবেশী দেশগুলির রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভারতের অভ্যন্তরে সক্রিয় বিশৃঙ্খলাকারী শক্তি, নকশাল সমস্যা, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রভাব এবং জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Advertisements

ভাগবত বলেন, “গত কয়েক বছরে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে যথেষ্ট অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও সাম্প্রতিক সময়ে নেপালে জনরোষের জেরে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ভারতেও একই ধরনের শক্তি সক্রিয় রয়েছে। সরকার ও সমাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, যোগ্য প্রশাসকের অভাব—এসব কারণ অসন্তোষকে উসকে দেয়। তবে সহিংসতার মাধ্যমে টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক পথে চলেই সমাজে রূপান্তর ঘটানো সম্ভব।”

   

তিনি সতর্ক করে দেন, এ ধরনের সহিংস পরিস্থিতিতে বিদেশি শক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। পাশাপাশি তিনি জোর দেন, ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির সাংস্কৃতিক বন্ধন ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক গভীর। তাই তাদের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ভারতেরও প্রাকৃতিক দায়বদ্ধতা।

নকশাল দমনে সরকারের ভূমিকা:

আরএসএস প্রধান স্বীকার করেন যে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও জনগণের উপলব্ধির কারণে নকশাল আন্দোলন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তিনি মনে করেন, “নকশাল সমস্যার মূল কারণ ছিল শোষণ, অবিচার, উন্নয়নের অভাব এবং প্রশাসনের অসংবেদনশীলতা। এখন যেহেতু বাধাগুলো দূর হয়েছে, তাই সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন—যাতে ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, সদিচ্ছা ও সম্প্রীতি নিশ্চিত হয়।”

প্রযুক্তি, সামাজিক টানাপোড়েন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ: Mohan Bhagwat Vijaya Dashami

ভাগবত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তিগত উন্নতির ইতিবাচক দিক মেনে নিলেও বলেন, মানুষের মানসিক অভিযোজনের গতি এর তুলনায় অনেক ধীর। এর ফলেই পরিবেশের ক্ষতি, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা, শত্রুতা ও হিংস্রতা বাড়ছে। তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, সংঘাত, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে ভারতীয় দর্শনভিত্তিক সমাধানের জন্য বিশ্ব অপেক্ষা করছে।”

ভোগবাদী উন্নয়ন মডেলের সমালোচনা:

পরিবেশ সংকটের প্রসঙ্গ টেনে ভাগবত বলেন, ভোগবাদী ও ভৌতপন্থী উন্নয়ন মডেলের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভয়াবহ আকার নিয়েছে। তিনি সতর্ক করে দেন, “গত ৩-৪ বছরে অনিয়মিত বৃষ্টি, ভূমিধস, হিমবাহ শুকিয়ে যাওয়া—এসব সমস্যার মূল কারণ ভোগবাদী উন্নয়ন। হিমালয়ের পরিবর্তন গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার জলের যোগানকে হুমকির মুখে ফেলছে। এগুলো ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জন্য সতর্কবার্তা।”

আরএসএস শতবর্ষ উদযাপন:

নাগপুরে আয়োজিত বিজয়া দশমী অনুষ্ঠান একইসঙ্গে আরএসএস-এর ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অনুষ্ঠানে সংঘের কর্মীরা ‘সঙ্ঘ প্রার্থনা’ পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গडकরি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। দেশ-বিদেশ থেকে আসা নানা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এই উদযাপনে যোগ দেন।

ভাগবতের এই ভাষণ শুধু সংঘের কর্মীদের জন্য নয়, বরং ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।