ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে দেশবাসীকে ভারতীয় পণ্যের ব্যবহারে জোর দেওয়ার এবং আমদানি করা পণ্যের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে হোলি, দীপাবলি এবং গণেশ পূজার মতো উৎসবের সময় দেশীয় পণ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি। চিনা পণ্যের বাজারে আধিপত্যের প্রতি পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “এমনকি গণেশ মূর্তিও বিদেশ থেকে আসছে, ছোট চোখের গণেশ মূর্তি যাদের চোখ ঠিকমতো খোলেও না।”
গুজরাটে জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “আমাদের গ্রামের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে হবে যেন তারা প্রতিজ্ঞা করে, লাভ যতই হোক না কেন, তারা বিদেশি পণ্য বিক্রি করবে না।” তিনি ভারতীয় বাজারে বিদেশি পণ্যের আধিক্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, গণেশ মূর্তি থেকে শুরু করে হোলির রং পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।”
চিনা পণ্যের আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ (modi)
প্রধানমন্ত্রীর (modi)এই মন্তব্য চিনের সস্তা পণ্য ভারতীয় বাজারে ডাম্পিংয়ের প্রেক্ষাপটে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উৎসবের সময় সাজসজ্জার আলো, পটকা, খেলনা এবং ধর্মীয় মূর্তির মতো পণ্য চিন থেকে স্বল্প মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে, যা স্থানীয় কারিগর এবং উৎপাদকদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই আমদানি পণ্যগুলো ভারতীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে, যা দেশীয় কারিগরদের জীবিকা এবং স্থানীয় শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোদী (modi) বলেন, “আমাদের স্থানীয় কারিগর এবং ছোট উদ্যোক্তারা এই বিদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের সমর্থন করা এবং ভারতীয় পণ্যের প্রতি গর্ববোধ জাগানো।” তিনি উৎসবের সময় দেশীয় পণ্য ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের উৎসবগুলো ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এই সময়ে আমাদের দেশীয় পণ্য ব্যবহার করে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারি।”
দৈনন্দিন জীবনে আমদানি পণ্যের ব্যবহার
প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে আমদানি পণ্যের ব্যবহার নিয়ে আত্মবিশ্লেষণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “একজন নাগরিক হিসেবে আমি আপনাদের একটি কাজ দিচ্ছি—বাড়ি ফিরে একটি তালিকা তৈরি করুন, ২৪ ঘণ্টায় আপনি কতগুলো বিদেশি পণ্য ব্যবহার করছেন।
আপনারা এমনকি বুঝতেও পারেন না, আপনার ব্যবহৃত হেয়ারপিন, চিরুনি পর্যন্ত বিদেশি।” তিনি আরও বলেন, এই ধরনের পণ্য আমদানির ফলে ভারতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং এটি কমানোর জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
অপারেশন সিঁদুর ও নাগরিক দায়িত্ব
প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) তাঁর বক্তৃতায় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর উল্লেখ করেন, যা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতকে বাঁচাতে হলে, ভারত গড়তে হলে, ভারতের উন্নতি করতে হলে, অপারেশন সিঁদুর কেবল সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব নয়, এটি ১৪০ কোটি নাগরিকের দায়িত্ব।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, আত্মনির্ভর ভারত গড়তে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে তিনি পাকিস্তানের প্রতি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোকে শান্তির পথে আসতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।” এই বক্তব্য পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য, যেখানে ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
স্থানীয় শিল্পের প্রতি সমর্থন
প্রধানমন্ত্রীর (modi) এই আহ্বান ভারতীয় স্থানীয় শিল্প ও কারিগরদের জন্য একটি বড় সুযোগ। ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো বিদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মোদী বলেন, “আমাদের কারিগররা, আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই দেশের মেরুদণ্ড। তাদের সমর্থন করা আমাদের দায়িত্ব।” তিনি গ্রামীণ ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় পণ্যের প্রচার এবং বিক্রয় বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, এই বক্তব্য ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মোদীজির এই আহ্বান ভারতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। আমাদের সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে।” তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে হলে সরকারকে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং স্থানীয় শিল্পের জন্য আরও সহায়তা প্রদান করতে হবে।
রয়েছে 7000mAh ব্যাটারি, স্মার্টফোনের বাজারে তুলকালাম করতে হাজির Realme GT 7 সিরিজ
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রধানমন্ত্রীর (modi) এই বক্তব্য ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের একটি অংশ। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভারতীয় বাজারে চিনা পণ্যের আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ভারত সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু চিনা পণ্যের উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মোদীর এই আহ্বান জনগণের মধ্যে দেশীয় পণ্যের প্রতি গর্ববোধ জাগিয়ে এই উদ্যোগগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
তবে, বিরোধী দলগুলো এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, “আত্মনির্ভরতার কথা বলা সহজ, কিন্তু সরকার কি স্থানীয় কারিগরদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে?” তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের নীতিগুলো বড় কর্পোরেটদের পক্ষে থাকলেও ক্ষুদ্র শিল্পগুলো উপেক্ষিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (modi) আত্মনির্ভরতার আহ্বান ভারতীয় অর্থনীতি এবং স্থানীয় শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উৎসবের সময় দেশীয় পণ্যের ব্যবহার এবং বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরতা কমানোর তাঁর বার্তা জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগাতে পারে। তবে, এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে সরকারের নীতিগত সমর্থন এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর। আগামী দিনে এই আহ্বান কীভাবে ভারতীয় বাজার এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, তা স্পষ্ট হবে।