মোদী-ট্রাম্প বৈঠকে বড় সিদ্ধান্ত, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার…

modi-trump-meeting-big-decision-500-billion-dollar-trade-deal

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। দুই দেশের মধ্যে এ মহৎ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নত করা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাণিজ্য ও শুল্ক নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ট্রাম্প ওই সময়ে একটি নতুন রিকিপ্রোক্যাল ট্যারিফ নীতি ঘোষণা করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সকল বাণিজ্যিক অংশীদারের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর ফলে, ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে।

   

এই বৈঠকে, দু’দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক শুল্ক এবং বাজার প্রবেশের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষভাবে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুল্ক কাঠামো এবং অন্য দেশে উৎপাদন করা অধিক পরিমাণে পণ্য ভারতের মতো দেশের বাজারে প্রবাহিত হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্মত হন যে, তাদের দলগুলিকে এসব বিষয় সমাধান করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যে কোনো শুল্ক ভারত আমাদের উপর আরোপ করবে, আমরাও সেটি ভারতকে আরোপ করব,” এবং তিনি এই শুল্ক নীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একরোখা মনোভাব প্রকাশ করেন।

এসময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য ‘মিশন ৫০০’ নামে একটি নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এর মাধ্যমে, ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প এবং মোদী একমত হন যে, এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জন করতে হলে নতুন ও সুষম বাণিজ্য শর্তাবলী প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি ২০২৫ সালের শরতের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে, বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি, শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, দু’দেশের মধ্যে শিল্প পণ্য, কৃষিপণ্য, এবং তথ্য-প্রযুক্তি পণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধি করা হবে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের বাজারে নিজেদের পণ্য প্রবেশে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এই চুক্তি শুধুমাত্র বাণিজ্য ক্ষেত্রেই নয়, শিল্পে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলি ইতিমধ্যেই আমেরিকায় ৭.৩৫ বিলিয়ন ডলারের অধিক বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে হিন্দালকো, জেএসডব্লিউ, এবং এসিপসিলন অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালসের মতো বড় কোম্পানি তাদের মার্কিন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে, যা স্থানীয় ৩,০০০ এর বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই নতুন বাণিজ্য চুক্তি দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় এবং শক্তিশালী হবে, যা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এক নতুন শক্তির প্রতিফলন ঘটাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যের পথে এই পদক্ষেপগুলি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দুই দেশের মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।