গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথমবার চলতি মাসেই মোদীর চীন সফর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিতব্য শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (Modi) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে চিন সফর করতে পারেন।…

Modi china visit

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিতব্য শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (Modi) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে চিন সফর করতে পারেন। এটি হবে ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রথম চিন সফর।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, এই সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে উপযুক্ত সময়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। এই সফর ভারত-চিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর থেকে উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে।

   

এই শীর্ষ সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সহ এসসিও-এর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং এসসিও-এর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত দিকনির্দেশনা। এসসিও-এর এই ২৫তম শীর্ষ সম্মেলনের থিম হবে “শাংহাই স্পিরিটকে সমুন্নত রাখা: এসসিও এগিয়ে চলছে।”

মোদীর এই সম্ভাব্য সফর ভারতের বৈদেশিক নীতির ‘মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট’ কৌশলের একটি প্রতিফলন। ভারত এসসিও, কোয়াড, ব্রিকস এবং জি৭-এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নিজের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে।

এই সফরের মাধ্যমে ভারত সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর জোর দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোদি সম্ভবত সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব এবং এসসিও-এর প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্যগুলির উপর আলোকপাত করবেন।

২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং অন্তত চারজন চিনা সেনা নিহত হন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চিন সফর করেন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলি মোদির সম্ভাব্য সফরের জন্য মাটি তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

এই সফরে মোদী ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে। দুই নেতার সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের সময়। এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ এবং চিনের দ্বিমুখী নীতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ এই সম্মেলনে আলোচনার বিষয় হতে পারে।

এসসিও হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংগঠন, যার সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে রয়েছে চিন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। এই সংগঠন বিশ্বের প্রায় ৪২ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ২০ শতাংশ বৈশ্বিক জিডিপি প্রতিনিধিত্ব করে। ভারত ২০১৭ সালে এসসিও-এর পূর্ণ সদস্য হয় এবং এরপর থেকে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।

এই সফর ভারতের বৈশ্বিক কূটনীতির একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ভারত নিজেকে ‘বিশ্ববন্ধু’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মোদীর উপস্থিতি এসসিও-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে ভারতের কৌশলগত গুরুত্ব এবং আঞ্চলিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে আরও জোরদার করবে। তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপস্থিতি এবং সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের অবস্থান কীভাবে সম্মেলনে উঠে আসে, তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।

বিজেপির মুখোশ খুলে দেব’! ঝাড়গ্রাম থেকে হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

এই সফরের মাধ্যমে ভারত-চিন সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হতে পারে। তবে, এই সম্মেলনের ফলাফল এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার দিকনির্দেশনা ভারতের বৈদেশিক নীতির ভবিষ্যৎ পথকে প্রভাবিত করবে।