প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) সোমবার হরিয়ানার ইয়ামুনানগরে একটি জনসভায় কংগ্রেসের শাসনামলের কথা স্মরণ করে জনগণকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের আগে কংগ্রেসের শাসনকালে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় বা ব্ল্যাকআউট নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। তিনি দাবি করেন, আজও যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকত, তাহলে দেশ এখনও এই সমস্যার মুখোমুখি হতো। ইয়ামুনানগরে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন
প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “আমাদের কংগ্রেসের শাসনের দিনগুলো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ২০১৪ সালের আগে, যখন কংগ্রেসের সরকার ছিল, তখন আমরা দেখেছি, গোটা দেশে ব্ল্যাকআউট হতো। আজ যদি কংগ্রেসের সরকার থাকত, তাহলে আমরা এখনও ব্ল্যাকআউটের মুখোমুখি হতাম।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা একটি উন্নত ভারত গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈচিত্র্যময় উদ্যোগ
মোদী (modi) উল্লেখ করেন, উন্নত ভারত গঠনে বিদ্যুৎ একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। তাই সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “ওয়ান নেশন-ওয়ান গ্রিড, নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সৌরশক্তি, পারমাণবিক খাতের সম্প্রসারণ—আমাদের লক্ষ্য হলো দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো। বিদ্যুতের অভাব যেন জাতি গঠনের পথে বাধা না হয়।”
আম্বেদকর জয়ন্তীতে শ্রদ্ধা
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১৩৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “আজ বাবাসাহেব আম্বেদকর জির জন্মবার্ষিকী। আমি সকল দেশবাসীকে আম্বেদকর জয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানাই। বাবাসাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রেরণা আমাদের উন্নত ভারতের দিকে যাত্রায় পথ দেখায়।” তিনি আরও বলেন, ইয়ামুনানগর শুধু একটি শহর নয়, এটি ভারতের শিল্প মানচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্লাইউড, পিতল, ইস্পাত—এই সমস্ত খাত ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
আম্বেদকরের আদর্শ ও শিল্পায়ন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাবাসাহেব শিল্পের উন্নয়নকে সামাজিক ন্যায়ের পথ হিসেবে দেখতেন। তিনি বলেন, “বাবাসাহেব ভারতের ক্ষুদ্র কৃষিজমির সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি বলতেন, দলিতদের কাছে কৃষির জন্য পর্যাপ্ত জমি নেই, তাই শিল্পায়নের মাধ্যমে দলিতরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।”
মোদী আরও উল্লেখ করেন, বাবাসাহেব দেশের প্রথম শিল্পমন্ত্রী শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, “বাবাসাহেব শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি, যিনি জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তাঁর সঙ্গে ভারতের শিল্পায়নের জন্য কাজ করেছিলেন।”
অপারেশন ব্রহ্মা চলাকালীন মাঝ আকাশে সাইবার হামলা, কড়া হাতে মোকাবিলা বায়ুসেনার
হরিয়ানার উন্নয়ন (modi)
হরিয়ানার উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হরিয়ানা টানা তৃতীয়বারের মতো দ্বৈত ইঞ্জিন সরকারের দ্বিগুণ গতিতে উন্নয়নের সাক্ষী হচ্ছে। উন্নত হরিয়ানা মানে উন্নত ভারত। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আজ এখানে শুরু হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তার জীবন্ত উদাহরণ। আমি হরিয়ানার জনগণকে এই প্রকল্পগুলোর জন্য অভিনন্দন জানাই।”
হিসার বিমানবন্দর ও অযোধ্যা ফ্লাইট
এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী হিসার বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং হিসার থেকে অযোধ্যাগামী প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইটের উদ্বোধন করেন। এই উদ্যোগ হরিয়ানার সংযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং অযোধ্যার তীর্থযাত্রীদের জন্য সুবিধা বাড়াবে।
জনমনে প্রভাব
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কংগ্রেসের শাসনামলের সমালোচনা এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের উপর জোর দিয়ে হরিয়ানায় রাজনৈতিক আলোচনাকে উসকে দিয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, মোদী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা এই বক্তব্যকে “রাজনৈতিক প্রচার” হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁদের আমলে বিদ্যুৎ খাতে অনেক সংস্কার শুরু হয়েছিল।
ইয়ামুনানগরের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সিং সাইনি, রাজ্যপাল বন্দারু দত্তাত্রেয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানোহর লাল খট্টর সহ অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হরিয়ানার জনগণের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ইয়ামুনানগর সফর এবং তাঁর বক্তব্য বিজেপির উন্নয়নের এজেন্ডাকে আরও জোরদার করেছে। আম্বেদকরের আদর্শ এবং শিল্পায়নের উপর তাঁর জোর দেওয়া বক্তব্য সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে সেতুবন্ধনের প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে। হরিয়ানার এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রাজ্যকে ভারতের শিল্প ও অর্থনৈতিক মানচিত্রে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।