দেশে ফিরেই মাকে গালাগালের কড়া জবাব দিলেন মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi) তাঁর স্বর্গীয় মা হীরাবেন মোদীকে নিয়ে গালাগালের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সম্প্রতি বিহারের দারভাঙ্গায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ‘ভোটার অধিকার…

Modi

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi) তাঁর স্বর্গীয় মা হীরাবেন মোদীকে নিয়ে গালাগালের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সম্প্রতি বিহারের দারভাঙ্গায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-র মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অশোভন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “আমার মাকে গালাগাল করা হয়েছে,” এবং তিনি এই ধরনের গালাগালের রাজনীতির তীব্র নিন্দা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে কংগ্রেস এবং তাদের বন্ধুরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণে নেমেছে কারণ তারা তাঁর উন্নয়নমূলক কাজ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না।

   

তিনি বলেন, “যারা উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে পারে না, তারা আমার মায়ের মতো নিরীহ ব্যক্তিকে টেনে আনে।” তিনি আরও বলেন, “আমি গালাগাল সহ্য করতে পারি, তবে এর পেছনে সত্যতা থাকতে হবে এবং হৃদয়ে কোনো মন্দ উদ্দেশ্য থাকা উচিত নয়।”

এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সমর্থকরা মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করছে। এই মঞ্চে রাহুল গান্ধী, তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের পোস্টার ছিল।

যদিও ঘটনার সময় এই নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও বিজেপি এই ঘটনার জন্য কংগ্রেস এবং আরজেডিকে দায়ী করেছে। বিজেপি নেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ এই ঘটনাকে “লজ্জাজনক” এবং “ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি অপমানজনক” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের অশ্লীল ভাষা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিহারের দারভাঙ্গায় এই ঘটনার পর পুলিশ মোহাম্মদ রিজভি ওরফে রাজা নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যিনি এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত । তাকে ১৪ দিনের জন্য জুডিশিয়াল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের মতে, রিজভি সিংহওয়ারা এলাকার বাসিন্দা এবং তিনি ভোটার অধিকার যাত্রার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।

এই ঘটনা বিহারের রাজনৈতিক মহলে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপি পাটনার কোতোয়ালি থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে এবং রাহুল গান্ধীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেছেন, “রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দল যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করছে, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাঁকে দেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

কংগ্রেস এই ঘটনা থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি বলেছেন, দল এই ধরনের ভাষাকে সমর্থন করে না এবং এই কাজের নিন্দা করেছে। তবে, বিজেপি এই ঘটনাকে কংগ্রেসের “ঘৃণার রাজনীতি” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

Advertisements

বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র বলেছেন, “কংগ্রেস এখন মহাত্মা গান্ধীর দল নয়, এটি একটি জাল গান্ধী দল, যারা সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।” এদিকে, কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং দাবি করেছেন যে গালাগালকারী ব্যক্তি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যদিও এই দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফ্যাক্ট-চেকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এই ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস এবং আরজেডির মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে এই ধরনের অশোভন ভাষা ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয়।” এই ঘটনার পর পাটনায় বিজেপি ও কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে, যেখানে পাথর ছোঁড়া এবং দলীয় পতাকা দিয়ে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে গালাগালের সংস্কৃতির একটি দুঃখজনক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনা কেবল রাজনৈতিক পরিবেশকে বিষাক্ত করে না, বরং দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপরও প্রশ্ন তুলে। মায়াওয়াতীর মতো নেতারাও এই ধরনের মন্তব্যকে “অশোভন এবং অসংসদীয়” বলে নিন্দা করেছেন, এবং এটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বলে মনে করেন।

এই ঘটনা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আলোচনায় আরও সংযম এবং শালীনতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতো একজন নেতার ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়ে এই ধরনের আক্রমণ শুধু রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভেদই বাড়ায় না, বরং জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

ইসলামিক প্রতিনিধি দলের সফরে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ মুখ‌্যমন্ত্রীর

আশা করা যায়, তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার পূর্ণ সত্য উদঘাটিত হবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।