অযোধ্যা, ২৫ নভেম্বর: রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলা উচ্ছ্বাস ও আবেগের মধ্যে আজ নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। সোমবার রাম মন্দিরে উন্মোচিত হল নতুন ‘ধর্ম ধ্বজ’। এই পতাকা নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তব্যে উঠে এল আধ্যাত্মিকতা, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং ভবিষ্যৎ ভারতের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদী বলেন, “এই ধর্ম ধ্বজ শুধু একটি পতাকা নয় এটি ভারতীয় সভ্যতার পুনর্জাগরণের প্রতীক।” আবেগঘন কণ্ঠে তিনি উল্লেখ করেন, এই পতাকা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের ত্যাগ, বিশ্বাস এবং সংগ্রামের ফল। তাঁর মতে, রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও যেন নতুন করে দৃঢ়তা অর্জন করেছে।
আফগানিস্তানে পাক এয়ার স্ট্রাইকে বইছে রক্তগঙ্গা
পতাকার বিশেষ বৈশিষ্ট্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গেরুয়া রঙ, সূর্যবংশের চিহ্ন, ‘ওম’ প্রতীক ও কোবিদার বৃক্ষ রামরাজ্যের ঐশ্বর্যের প্রতিফলন।” তাঁর বক্তব্যে আরও উঠে আসে যে এই পতাকা আধ্যাত্মিক শক্তি এবং ন্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা পুনরায় সুসংহত করবে।
মোদীর দাবি, রাম মন্দিরের নতুন পতাকা কেবল ধর্মীয় অনুভূতির বাহক নয়, বরং সমাজের ভবিষ্যৎ আদর্শের নির্দেশও বটে। তিনি বলেন, “এই পতাকায় রয়েছে এক সংকল্প, রয়েছে সংগ্রামের কাহিনি, রয়েছে শতাব্দীর ত্যাগের পর সৃষ্টির পুনর্জন্ম।” দেশজুড়ে রাম ভক্তদের আবেগকে তিনি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, হাজার হাজার বছরের জন্য এই পতাকা রামের মূল্যবোধ ধরে রাখবে — সত্যকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ, সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানুষের মাঝে শান্তি ও সুখের পরিবেশ তৈরি।
সমাবেশে উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “রামরাজ্য মানে এমন একটি সমাজ যেখানে বৈষম্য নেই, কষ্ট নেই, দারিদ্র্য নেই, কেউ অসহায় নয়।” তিনি পুনরায় জানান, রাম শুধু ধর্মীয় আস্থা নন, বরং ন্যায়, মানবিকতা ও পরার্থচেতনার প্রতীক। তাঁর মতে, আধুনিক ভারতের নির্মাণেও সেই মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ।
অযোধ্যায় এই উন্মোচন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন রাম মন্দির চত্বরে। ভক্তদের ভিড় সামলাতে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের বিশেষ মুহূর্তে ঘণ্টা-শঙ্খধ্বনির মধ্যে পতাকা উন্মোচিত হয় এবং চতুর্দিকে জুড়ে ওঠে “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি। অনেক ভক্তের চোখে জলও দেখা গেছে, তাদের ভাষায় — এটি “অতৃপ্ত ইতিহাসের পরিপূর্ণতা”।
ধর্মীয় বিশারদদের মতে, ধর্ম ধ্বজের এই ঐতিহাসিক উন্মোচন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার পর সংস্কৃতিক ভাবগাম্ভীর্যকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেল। তারা বলছেন, পতাকাটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে স্মরণীয় করে রাখবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সৃষ্ট আবেগের ফলশ্রুতিতে এই অনুষ্ঠান আগামী দিনেও জাতীয় রাজনৈতিক ন্যারেটিভে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আপাতত অযোধ্যা শুধুই ভক্তি, আবেগ এবং উদযাপনের আবরণে মোড়া।
নতুন ধর্ম ধ্বজ উত্তোলনের মুহূর্তটি শুধু এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয় জনমত মতে, এটি কোটি মানুষের বিশ্বাসের উত্তরাধিকার বহন করে নিয়ে চলার প্রতিশ্রুতির প্রকাশ। ভক্তদের আশা, রামের মূল্যবোধকে সামনে রেখে ভবিষ্যতের ভারত আরও মানবিক, সমতামূলক এবং উন্নত পথে এগোবে।
