প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) শনিবার নীতি আয়োগের ১০ম পরিচালন পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করে বলেছেন, কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্য একযোগে ‘টিম ইন্ডিয়া’র মতো কাজ করলে কোনও লক্ষ্যই অসম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বিকশিত ভারত’ ১৪০ কোটি ভারতীয়ের স্বপ্ন এবং “যখন প্রতিটি রাজ্য বিকশিত হবে, তখনই ভারত বিকশিত হবে।”
এই বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিকশিত রাজ্যের মাধ্যমে বিকশিত ভারত@২০৪৭’। প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “আমাদের একটিই লক্ষ্য থাকা উচিত—২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিকশিত করা। প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি শহর, প্রতিটি নগর পালিকা এবং প্রতিটি গ্রামকে বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এই পথে কাজ করলে আমাদের ২০৪৭ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।”
নীতি আয়োগের পোস্ট অনুযায়ী (modi)
নীতি আয়োগের পোস্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, নীতি ও কর্মসূচি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে তা সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। “যখন মানুষ এই পরিবর্তন অনুভব করবে, তখনই তা শক্তিশালী হবে এবং একটি আন্দোলনে রূপান্তরিত হবে,” তিনি বলেন। তিনি আরও যোগ করেন, “১৪০ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের কাছে একটি দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। আমাদের একটি দল হিসেবে একযোগে কাজ করতে হবে।”
মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত
মোদী মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে সম্মানের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমাদের এমন আইন ও নীতি প্রণয়ন করতে হবে যাতে মহিলারা কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনকভাবে অংশ নিতে পারেন।” তিনি রাজ্যগুলোর দ্রুত নগরায়নের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎমুখী শহর গড়ার আহ্বান জানান। “আমাদের ভবিষ্যৎমুখী শহরের দিকে এগোতে হবে।
উন্নয়নের ইঞ্জিন হবে উদ্ভাবন, বৃদ্ধি এবং স্থায়িত্ব,” তিনি বলেন। এছাড়াও, তিনি প্রতিটি রাজ্যে বিশ্বমানের পর্যটন গন্তব্য গড়ার প্রস্তাব দেন। “প্রতি রাজ্যে একটি করে বিশ্বমানের পর্যটন গন্তব্য তৈরি করা উচিত, যেখানে সমস্ত সুবিধা ও অবকাঠামো থাকবে। এটি পার্শ্ববর্তী শহরগুলোরও উন্নয়নে সহায়ক হবে,” তিনি যোগ করেন।
বৈঠকে উদ্যোক্তা প্রচার, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই বৈঠক কেন্দ্র, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিকশিত ভারত ২০৪৭-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঐকমত্য গঠনের একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “রাজ্যগুলোই বিকশিত ভারত গঠনের ভিত্তি হবে। আমাদের সকলের একযোগে কাজ করতে হবে।”
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা
এই বৈঠকের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা, যা গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর তীব্র হয়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, এবং ভারত প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনার পর দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে, এবং ডিজিসিএ প্রতিরক্ষা বিমানঘাঁটিতে জানালার পর্দা বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করে। এই প্রেক্ষাপটে, নীতি আয়োগের বৈঠক উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দেয়।
প্রধানমন্ত্রী (modi) জোর দিয়ে বলেন, রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের সকলের একটি লক্ষ্যের দিকে কাজ করতে হবে। যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তবে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।” তিনি আরও বলেন, প্রতিটি নাগরিকের জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে, এবং এই পরিবর্তনকে একটি জন-আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে হবে।
নীতি আয়োগের এই বৈঠকে রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে অংশ নেননি, যা নিয়ে বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করেছে। তারা দাবি করেছে, এই অনুপস্থিতি রাজ্যের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা জবাবে বলেছে, এটি কেন্দ্রের “বাংলা-বিরোধী” নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
DRDO-তে বিজ্ঞানী হওয়ার সুযোগ, GATE স্কোরের ভিত্তিতে পাবেন চাকরি
সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব
মোদী (modi) বলেন, “আমাদের নীতিগুলো এমন হওয়া উচিত যাতে সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব পড়ে।” তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং পর্যটনের মতো ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোর ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি পর্যটন শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য প্রতিটি রাজ্যে একটি করে বিশ্বমানের গন্তব্য তৈরির পরামর্শ দেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
বৈঠকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “আমাদের যুবকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।” তিনি উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। নগরায়নের প্রেক্ষিতে, তিনি বলেন, “ভারত দ্রুত নগরায়নের দিকে এগোচ্ছে।
আমাদের শহরগুলোকে ভবিষ্যৎমুখী করতে হবে, যেখানে টেকসই উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।” তিনি স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং রাজ্যগুলোকে এই দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এই বৈঠক বিকশিত ভারতের রূপরেখা তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী (modi) বলেন, “আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ১৪০ কোটি মানুষের জন্য হওয়া উচিত। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তবে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন ২০৪৭-এর আগেই বাস্তবায়িত হবে।” তিনি রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ফেডারেলিজমের পরিবর্তে সমন্বিত উন্নয়নের উপর জোর দেন।
এই বৈঠক ভারতের উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর মাধ্যমে বিকশিত ভারতের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমাদের একটি দল হিসেবে কাজ করতে হবে। এটি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের সুযোগ।” এই বৈঠকের ফলাফল আগামী দিনে ভারতের উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।