রবিবার দিল্লির রোহিণীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi) দুটি বড় জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, যার মোট মূল্য প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পগুলি হলো দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের দিল্লি অংশ এবং আরবান এক্সটেনশন রোড-II (UER-II)।
এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সাইনি উপস্থিত ছিলেন। এই প্রকল্পগুলি দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের (NCR) যানজট কমানোর জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (PMO) একটি বিবৃতি অনুযায়ী, আরবান এক্সটেনশন রোড-II (UER-II) এবং দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের দিল্লি অংশ দিল্লির যানজট কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পগুলি প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং নিরবচ্ছিন্ন গতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
আরবান এক্সটেনশন রোড-II হল ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মহাসড়ক, যা দিল্লির আলিপুর থেকে শুরু হয়ে মুন্ডকা, বক্করওয়ালা, নজফগড় এবং দ্বারকা হয়ে মহিপালপুরের কাছে জাতীয় মহাসড়ক-৪৮-এ শেষ হয়। এই প্রকল্পটি প্রায় ৭,৭১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এটি দিল্লির তৃতীয় রিং রোড হিসেবে পরিচিত।
এই মহাসড়কের ৫৪.২১ কিলোমিটার দিল্লিতে এবং ২১.৫ কিলোমিটার হরিয়ানায় অবস্থিত। এটি দিল্লি-চণ্ডীগড়, দিল্লি-রোহতক এবং সোনিপতের মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এই প্রকল্পকে “দিল্লির জন্য ঐতিহাসিক উপহার” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এই মহাসড়ক শুধু একটি পরিকাঠামো প্রকল্প নয়, এটি দিল্লির ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ।
এটি যানজট কমাবে, ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে এবং দিল্লি ও এনসিআর-এর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।” তিনি আরও জানান, এই মহাসড়কের মাধ্যমে সিঙ্ঘু বর্ডার থেকে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে এখন মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগবে, যা আগে প্রায় দুই ঘণ্টা ছিল।
দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের দিল্লি অংশটি ১০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি প্রায় ৫,৩৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এই অংশটি শিব মূর্তি চৌরাস্তা থেকে দ্বারকা সেক্টর-২১-এর রোড আন্ডার ব্রিজ (RUB) পর্যন্ত ৫.৯ কিলোমিটার এবং RUB থেকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্ত পর্যন্ত ৪.২ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই মহাসড়ক যশোভূমি, ডিএমআরসি ব্লু লাইন এবং অরেঞ্জ লাইন, আগামী বিজওয়াসান রেলওয়ে স্টেশন এবং দ্বারকা ক্লাস্টার বাস ডিপোর সঙ্গে মাল্টি-মোডাল সংযোগ প্রদান করবে।
এই দুটি প্রকল্প দিল্লির ইনার এবং আউটার রিং রোডের উপর চাপ কমাবে এবং মুকারবা চক, মধুবন চক, পীরাগড়ি চক, ধৌলা কুয়ান এবং জাতীয় মহাসড়ক-৯-এর মতো প্রধান সংযোগস্থলে যানজট হ্রাস করবে। এছাড়া, এই মহাসড়কগুলি সোনিপত এবং বাহাদুরগড়ের শিল্প কেন্দ্রগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে শিল্প ও পণ্য পরিবহণের গতি বাড়াবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি জানিয়েছেন, UER-II প্রকল্পে গাজীপুর ল্যান্ডফিল থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পগুলি দিল্লির যানজট কমানোর পাশাপাশি পরিবেশের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।”
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সৈনি বলেন, এই প্রকল্পগুলি দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের সঙ্গে হরিয়ানার সংযোগ আরও জোরদার করবে এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কাঠুয়ায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভূমিধস! সাতজনের মৃত্যু
এই প্রকল্পগুলি দিল্লি ও এনসিআর-এর জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যা ভ্রমণের সময় কমানো, যানজট হ্রাস এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করবে। দিল্লিবাসী এই “ঐতিহাসিক উপহার”কে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটি অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।