মোদী-নেতানিয়াহু ফোনালাপে উঠে এল গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছেন । এই কথোপকথনে নেতানিয়াহু পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদীকে…

modi gets phone call from israel

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (modi) শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছেন । এই কথোপকথনে নেতানিয়াহু পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদীকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করে অঞ্চলটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার দ্রুত পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

এই কথোপকথন এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ইসরায়েল ইরানের উপর বড় মাপের সামরিক হামলা চালিয়েছে, যাকে তারা ‘রাইজিং লায়ন’ অপারেশন নামে অভিহিত করেছে। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডাররা নিহত হয়েছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।

   

ফোন কলের প্রেক্ষাপট (modi)

প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর থেকে ফোন কল পেয়েছি। তিনি আমাকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। আমি ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার দ্রুত পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছি।”

এই কথোপকথন (modi) ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে হয়েছে। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ২০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই অভিযানকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি দূর করার লক্ষ্যে পরিচালিত বলে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েলি (modi) প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক্স-এ জানিয়েছে, এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) কমান্ডার এবং ইরানের জরুরি কমান্ডের কমান্ডার নিহত হয়েছেন। আইডিএফ বলেছে, “এই তিনজন নৃশংস গণহত্যাকারী ছিল, যাদের হাতে আন্তর্জাতিক রক্ত লেগে আছে।

তাদের ছাড়া পৃথিবী (modi) এখন আরও নিরাপদ।” নেতানিয়াহু বলেন, ইরান বিশ্বব্যাপী সতর্কতা উপেক্ষা করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এবং নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। তিনি এই পরিস্থিতির তুলনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে করে বলেন, “ইসরায়েল কখনোই তাদের ধ্বংসের উপায় তৈরি করতে দেবে না।”

ভারতের অবস্থান

প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে তিনি শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে কথা বলেছেন। ভারত ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের ক্ষেত্রে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।

মোদী (modi) পূর্ববর্তী কথোপকথনেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সমর্থন এবং অঞ্চলটিতে উত্তেজনা হ্রাসের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁরা শেষবার কথা বলেন, যখন মোদী হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর অঞ্চলটিতে উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মোদী (modi) এই কথোপকথনেও স্পষ্ট করেছেন যে, ভারতে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই বলে মনে করে এবং জিম্মিদের নিরাপদ মুক্তি ও মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। তিনি বলেন, “ভারত অঞ্চলটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে প্রস্তুত।” ভারতের এই অবস্থান ইসরায়েলের সঙ্গে তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতি সমর্থনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

ইসরায়েলের ‘রাইজিং লায়ন’ অপারেশন ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সুবিধা, শীর্ষ বিজ্ঞানী এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রোগ্রামকে লক্ষ্য করে। নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান গত বছর ইসরায়েলের উপর ৩০০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। শীঘ্রই এই মিসাইলগুলো পারমাণবিক পেলোড বহন করতে পারে, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলবে।”

Advertisements

তিনি ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সিদের, যেমন হামাস ও হিজবুল্লাহ, ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা আমাদের আরব প্রতিবেশীদেরও রক্ষা করছি।” ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা লেবানন বা গাজায় সৈন্য মোতায়েন করবে না, তবে ইসরায়েলের এই হামলার জন্য “শাস্তি” নিশ্চিত করবে।

ভারতের উপর প্রভাব

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় ৪৪% তেল আমদানি করে, এবং এই উত্তেজনা তেলের দাম বাড়াতে পারে, যা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করবে। পশ্চিমে যাওয়া ফ্লাইটের রুট বন্ধ হতে পারে, যা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য সমস্যা তৈরি করবে।

মধ্যপ্রাচ্যে ৯০ লক্ষ ভারতীয় প্রবাসী রয়েছেন, যারা এই উত্তেজনার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ইসরায়েলের হামলাকে ‘অন্যায্য’ বলে নিন্দা করে বলেছেন, “এটি ভারতের জ্বালানি দাম, শেয়ার বাজার এবং ফ্লাইটের উপর প্রভাব ফেলবে।” তিনি ইরানে আটকে থাকা কাশ্মীরি ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য ভারত সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক

ভারত ও ইসরায়েলের (modi) মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১৬ আগস্টের কথোপকথনে মোদী ও নেতানিয়াহু দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

মোদী (modi) ইসরায়েলের ইহুদি নববর্ষ এবং সুক্কোট উৎসবের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে, ভারত প্যালেস্টাইনের জনগণের প্রতিও সমর্থন জানিয়ে আসছে, যা নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে প্রকাশ পায়।

ভারতের এই রেজিমেন্ট না থাকলে পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত হত না!

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “সমঝোতা করুন, নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।” তিনি ইসরায়েলের সামরিক শক্তির প্রশংসা করে বলেন, “ইসরায়েলের কাছে মার্কিন সরঞ্জামের প্রচুর মজুত রয়েছে।” তবে, ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক কথোপকথনে উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে কথা বলেছেন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর (modi) নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথোপকথন ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। ভারতকে এই সংঘাতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব মোকাবেলা করতে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।