প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi) আগামী ২৫ জুলাই মালদ্বীপে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি মালদ্বীপের ৬০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে অংশ নেবেন। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর আমন্ত্রণে এই সফরে তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, “আগামী পরশু, ২৫ জুলাই, আমি মালদ্বীপে থাকব। এই বছর আমরা ভারত-মালদ্বীপ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। রাষ্ট্রপতি মুইজ্জুর সঙ্গে আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন গতি যোগ করবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন এই সফরটি ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে সম্প্রতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পটভূমিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৩ সালে মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছিল।
তবে, গত বছর মুইজ্জুর ভারত সফর এবং ভারতের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়েছে। ভারত ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩০ বিলিয়ন রুপির মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাবে। পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী জানিয়েছেন, “ভারত মালদ্বীপের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, যেখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
আমরা একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছি।” তিনি আরও বলেন, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, মৎস্য শিল্প এবং অন্যান্য নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হবে।
মোদী এই সফরে মালদ্বীপে ভারত-সহায়তায় নির্মিত একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রকল্প, যা ভারতীয় ঋণ এবং অনুদানের মাধ্যমে চারটি দ্বীপকে সংযুক্ত করবে, এই সফরের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া, মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ভারতের সহযোগিতা, যেমন নৌ-মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং সমুদ্র নজরদারি, এই আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে মুইজ্জুর ভারত সফরে দুই দেশ ‘ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতা’র জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গির অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে উচ্চ-স্তরের কোর গ্রুপ (এইচএলসিজি) দুইবার বৈঠক করেছে। মোদীর এই সফর এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে আরও গতি যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি মুডিজ মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং হ্রাস করেছে, যেখানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ভারতের আর্থিক সহায়তা এই সংকট এড়াতে সহায়ক হয়েছে।
মোদীর এই সফর ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতি এবং ‘মহাসাগর’ (মিউচুয়াল অ্যান্ড হলিস্টিক অ্যাডভান্সমেন্ট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ অ্যাক্রস রিজিয়নস) দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। প্রাক্তন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাশিদ বলেছেন, এই সফর ভারতীয় পর্যটকদের আগমন বাড়াবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরায় নিশ্চিত করবে।
ওড়ার ঠিক আগে ইন্ডিগোর বিমানে আগুন, ‘মেডে’ কল পাইলটের
এই সফরের মাধ্যমে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।