জাপানে পৌঁছতেই মোদীর কাছে কি আবদার নেতাজী কন্যার ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা অনিতা বোস পাফ(Narendra Modi) আবারও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর পিতার দেহাবশেষ জাপানের রেনকোজি মন্দির থেকে ভারতে…

Modi

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা অনিতা বোস পাফ(Narendra Modi) আবারও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর পিতার দেহাবশেষ জাপানের রেনকোজি মন্দির থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। নেতাজির ৮০তম মৃত্যুবার্ষিকীর প্রাক্কালে তিনি এই আবেদন জানিয়েছেন, যা ভারতীয়দের মনে গভীর আবেগ এবং জাতীয় গৌরবের প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে।

অনিতা বোস ফাফ, যিনি জার্মানিতে অর্থনীতিবিদ হিসেবে কর্মরত, তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, “১৮ আগস্ট, ২০২৫নেতাজীর ৮০তম মৃত্যুবার্ষিকী একটি গুরুতর বাস্তবতার স্মারক। আমাদের জাতীয় নায়ক এখনও নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন, যদিও ভারত ৭৮ বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করেছে।”

   

তিনি আরও জানিয়েছেন যে, নেতাজীর দেহাবশেষ বর্তমানে টোকিওর রেনকোজি মন্দিরে সংরক্ষিত আছে এবং এটি ভারতে ফিরিয়ে আনা জাতীয় সম্মানের বিষয়।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানের তাইপেইতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে আনুষ্ঠানিক ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে।

তবে, তাঁর মৃত্যু নিয়ে দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন তত্ত্ব এবং বিতর্ক চলছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে নেতাজী সম্ভবত সোভিয়েত রাশিয়ায় বা ভারতে গোপনে বেঁচে ছিলেন। অনিতা বোস ফাফ এই সমস্ত তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে তাঁর পিতার মৃত্যুর বিষয়টি গ্রহণ করা উচিত এবং তাঁর দেহাবশেষ ভারতে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে এই বিতর্কের অবসান ঘটানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেছেন, “আমি চাই ভারতে একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাজীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হোক। তাঁর অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর ভস্ম ভারতের মাটিতে বিলীন করা উচিত।”অনিতা বোস পাফ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে রেনকোজি মন্দিরে সংরক্ষিত দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে এই বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান হয়।

তিনি বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারে যে রেনকোজি মন্দিরে রক্ষিত ভস্ম নেতাজির কি না।” তিনি জানিয়েছেন যে জাপানের সরকার এবং মন্দিরের পুরোহিতরা এই পরীক্ষার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। তবে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।নেতাজির মৃত্যু নিয়ে বিতর্কের ইতিহাস দীর্ঘ।

Advertisements

১৯৫৬ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে শাহনওয়াজ খানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যা নেতাজীর বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। তবে, নেতাজির ভাই সুরেশচন্দ্র বসু এই রিপোর্টের বিরোধিতা করেছিলেন। পরবর্তীতে, ১৯৯৯ সালে জাস্টিস এম কে মুখার্জি কমিশন গঠন করা হয়, যা দাবি করেছিল যে নেতাজী সম্ভবত ১৯৪৫ সালের পরেও বেঁচে ছিলেন। তবে, এই রিপোর্ট ভারত সরকার গ্রহণ করেনি।

নেতাজীর প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসুও এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “নেতাজীর দেহাবশেষ ভারতে ফিরিয়ে আনা উচিত এবং তাঁর শেষকৃত্য হিন্দু রীতি অনুযায়ী সম্পন্ন করা উচিত।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে সরকারের নীরবতা এই বিষয়ে জাতীয় নায়কের প্রতি অসম্মানের সমতুল্য।

জাপানের রেনকোজি মন্দিরে নেতাজীর দেহাবশেষ তিন প্রজন্ম ধরে পুরোহিতদের দ্বারা সম্মানের সঙ্গে রক্ষিত হয়ে আসছে। জাপান সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ বারবার ভারত সরকারের কাছে এই দেহাবশেষ হস্তান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে, রাজনৈতিক জটিলতা এবং জনমানসে বিতর্কের আশঙ্কায় ভারত সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছে বলে মনে করা হয়।

বীরভূমে অবৈধ বালিখাদানে লাগাম, জেলাশাসকের কড়া পদক্ষেপ

অনিতা বোস পাফ তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, “নেতাজির জীবনে ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই ছিল না। তিনি স্বাধীন ভারতে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা তাঁর জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তাই অন্তত তাঁর দেহাবশেষ ভারতের মাটিতে ফিরিয়ে আনা উচিত।” তিনি ভারতীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তারা যেন এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানায়।