আয়ুর্বেদ আহারে স্বীকৃতি দিল মোদী সরকার

ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সংস্কৃতিতে এবার আয়ুর্বেদের ছোয়া (Modi Government)। কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় খাদ্য সুরক্ষা ও মান নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ (FSSAI) ২৫ জুলাই তারিখে এক ঐতিহাসিক…

Modi Government permission for ayurveda ahar

ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সংস্কৃতিতে এবার আয়ুর্বেদের ছোয়া (Modi Government)। কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতীয় খাদ্য সুরক্ষা ও মান নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ (FSSAI) ২৫ জুলাই তারিখে এক ঐতিহাসিক সরকারি আদেশ জারি করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে “আয়ুর্বেদ আহার”কে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্য পণ্যের ‘ক্যাটাগরি এ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে কাঁড়া, হিম, মন্থ, লাজ, সূপ, গুটিকা, পেয়, ঘি, লাড্ডু, খিচুড়ি, মিষ্টিরর মতো ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক খাদ্য এখন থেকে সম্পূর্ণ আইনসঙ্গতভাবে প্রস্তুত, বিক্রি এবং পরিবেশন করা যাবে। এই পদক্ষেপ ভারতের হাজার বছরের পুরনো খাদ্য সংস্কৃতিকে আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে একত্র করে বিশ্বব্যাপী প্রচারের পথ প্রশস্ত করেছে।

   

আয়ুর্বেদ আহারের আইনি স্বীকৃতি

FSSAI এবং আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এই নতুন নির্দেশিকা ২০২২ সালে জারি করা ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস (আয়ুর্বেদ আহার) রেগুলেশনস’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই নিয়মাবলীর আওতায় শুধুমাত্র সেই খাদ্য পণ্যগুলোকে আয়ুর্বেদ আহার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

যেগুলো প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ যেমন—চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, ভাবপ্রকাশ, কাশ্যপ সংহিতা ইত্যাদিতে বর্ণিত রেসিপি, উপাদান এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি হয়। এই তালিকায় বর্তমানে ২২টি শ্রেণির প্রায় ৫০টি ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদিক খাদ্য পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করছে যে ভোক্তারা শুধুমাত্র খাঁটি এবং নিরাপদ আয়ুর্বেদিক খাদ্যই গ্রহণ করবেন।খাদ্য

ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ

যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা, যারা FSSAI-এর অধীনে ফুড বিজনেস অপারেটর (FBO) হিসেবে রয়েছে এবং যাদের পণ্য তালিকাভুক্ত আয়ুর্বেদ আহারের রেসিপি বা আয়ুর্বেদ গ্রন্থে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি, তারা এই বিভাগের আওতায় কাজ করতে পারবেন।

ভবিষ্যতে নতুন পণ্য তালিকাভুক্ত করার জন্য FBO-দের আবেদন করার সুযোগও রাখা হয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রন্থ থেকে সুস্পষ্ট রেফারেন্স প্রদান করতে হবে। এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে যে আয়ুর্বেদ আহারের সত্যতা এবং গুণগত মান অক্ষুণ্ণ আছে।

আয়ুর্বেদ আহারের তাৎপর্য

আয়ুর্বেদ আহার শুধু খাদ্য নয়, এটি ভারতের হাজার বছরের পুরনো স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার দর্শনের একটি অংশ। এই খাদ্য পণ্যগুলো প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে তৈরি করা হয়, যেখানে পুষ্টি, ভারসাম্য এবং ঋতু অনুযায়ী উপযোগিতার উপর জোর দেওয়া হয়।

আয়ুর্বেদের নীতি অনুসারে এই খাদ্যগুলো শরীরের পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে এবং সামগ্রিক সুস্থতা প্রচার করে। আধুনিক জীবনযাত্রার দ্রুত গতির মধ্যেও এই খাদ্য পদ্ধতি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।

সরকারি নেতৃত্বের প্রশংসা

২০২৩ সালের নভেম্বরে ওয়ার্ল্ড ফুড ইন্ডিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “ভারতের টেকসই খাদ্য সংস্কৃতি হাজার বছরের যাত্রার ফল। আমাদের পূর্বপুরুষরা আয়ুর্বেদকে সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। যেমন ভারতের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে।

Advertisements

যোগ দিবস যোগকে বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিয়েছে, তেমনি এখন মিলেটও বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছাবে।” এই দৃষ্টিভঙ্গিরই একটি অংশ হিসেবে আয়ুর্বেদ আহারের আইনি স্বীকৃতি এবং তালিকাভুক্তি ভারতীয় খাদ্য সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছে।আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী প্রতাপরাও জাধব জনগণকে আয়ুর্বেদ আহারকে দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই সময়-পরীক্ষিত খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীরের পুষ্টি জোগায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে এবং সামগ্রিক সুস্থতা প্রচার করে। আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রায় আয়ুর্বেদ আহার গ্রহণ প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবনযাপনের একটি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ।”

আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা

আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রী বৈদ্য রাজেশ কোটেচা বলেছেন, “আয়ুর্বেদ আহার পণ্যের নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ ভারতের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ব্যবস্থাকে আধুনিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি খাদ্য ব্যবসায়ীদের জন্য স্পষ্টতা প্রদান করার পাশাপাশি ভোক্তাদের মধ্যে আয়ুর্বেদ-ভিত্তিক পুষ্টির প্রতি আস্থা বাড়াবে।”

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সঞ্জীব শর্মা এই উদ্যোগকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আয়ুষ আহার কম্পেন্ডিয়াম তৈরি করা আয়ুর্বেদিক খাদ্য প্রণালীকে নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মাধ্যমে মূলধারায় নিয়ে আসার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এনআইএ প্রাচীন গ্রন্থ থেকে ঐতিহ্যবাহী প্রণালীগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করে সংকলন করেছে। এটি খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি পথনির্দেশক নথি হিসেবে কাজ করবে এবং জনগণকে নিরাপদ, খাঁটি এবং সময়-পরীক্ষিত খাদ্য সমাধান সরবরাহ করবে।”

ভারতের ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে বেসামাল বাংলাদেশ

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

আয়ুর্বেদ আহারের এই স্বীকৃতি শুধু ভারতের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্বব্যাপী এই খাদ্য সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই জীবনযাত্রার প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রেক্ষাপটে, আয়ুর্বেদ আহার বিশ্বব্যাপী একটি নির্ভরযোগ্য পুষ্টি বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

এই উদ্যোগ শিল্পের স্টেকহোল্ডারদের জন্য নিয়ন্ত্রণ স্পষ্টতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আয়ুর্বেদ-ভিত্তিক পুষ্টির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাকে উৎসাহিত করবে।এই পদক্ষেপ ভারতের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানকে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বিত করে একটি সুস্থ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।