ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Modi) আগামী ২৩ থেকে ২৬ জুলাই ইংল্যান্ড এবং মালদ্বীপে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বি-দেশীয় সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক বিষয়ে গভীর আলোচনা। আমেরিকাতে তিনি ভারত-ইংল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করবেন।
এই চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এরপর তিনি মালদ্বীপে ৬০তম জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন। এই সফর ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবকরা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের প্রথম গন্তব্য হবে ইংল্যান্ড। সেখানে তিনি ২৩-২৪ জুলাই থাকবেন। এই সফরে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ভারত-ইংল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এই চুক্তি ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানির উপর শুল্ক হ্রাস করবে, যা ভারতীয় পণ্যের জন্য ব্রিটিশ বাজারে প্রবেশ সহজ করবে।
একইভাবে, ব্রিটিশ পণ্য যেমন হুইস্কি এবং গাড়ির জন্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশ সহজতর হবে। তিন বছরের কঠিন আলোচনার পর এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই চুক্তি ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ১২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
ইংল্যান্ড সফরের পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৫-২৬ জুলাই মালদ্বীপে যাবেন। এটি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর প্রশাসনের অধীনে তাঁর প্রথম সফর। মালদ্বীপের ৬০তম জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি, তিনি প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন।
এই আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলি প্রাধান্য পাবে। মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা এবং মুইজ্জু প্রশাসনের চীনপন্থী অবস্থানের কারণে কিছুটা উত্তেজনার মুখোমুখি হয়েছিল।
তবে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে মুইজ্জুর ভারত সফরের পর সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। মোদীর এই সফর ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে।
মালদ্বীপের সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারত-সমর্থিত বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন, যার মধ্যে গ্রেটার মালে কানেক্টিভিটি প্রকল্প অন্যতম। এই প্রকল্পের জন্য ভারত ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদান করেছে।
এছাড়া, ভারত মালদ্বীপকে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ৩০ বিলিয়ন রুপি এবং ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি মুদ্রা বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে সহায়তা করেছে। এই সফরে সমুদ্র নিরাপত্তা, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
এই সফর ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের দুটি দিককে তুলে ধরে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং মালদ্বীপের সঙ্গে প্রতিবেশী সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি ভারতের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং পশ্চিমের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, মালদ্বীপ সফর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মোদীর এই সফর ভারতের বিশ্ব মঞ্চে ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর ভারতের বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক কূটনীতির একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে।
অস্কারের সহকারী হিসেবে এবার আদ্রিয়ান, সঙ্গে কারা?
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের ভারসাম্য প্রদর্শন করে। এই সফরের ফলাফল ভারতের বৈদেশিক নীতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।