আসিয়ান সম্মেলনে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কুয়ালালামপুরে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হতে চলা শীর্ষ বৈঠকে তিনি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য সাক্ষাৎ ঘিরে যে জল্পনা চলছিল, তা আপাতত শেষ হল।
আসিয়ান সম্মেলন
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আসিয়ান সম্মেলনটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। সেখানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া বার্তায় মোদী লিখেছেন, “আমার প্রিয় বন্ধু, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে উষ্ণ আলোচনা করেছি। মালয়েশিয়ার আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছি… ভার্চুয়ালি আসিয়ান-ভারত সম্মেলনে যোগ দিতে এবং আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে মুখিয়ে আছি।”
মোদীর অনুপস্থিতি কেন গুরুত্বপূর্ণ Modi ASEAN Summit virtual
২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মোদী প্রতি বছর সরাসরি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কোভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সম্মেলন ভার্চুয়ালি হয়েছিল। মাত্র একবার, ২০২২ সালে-প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত ছিলেন।
সেই ধারাবাহিকতা থেকে এবারের সরে দাঁড়ানোয় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অন্যতম স্তম্ভই এই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দশ দেশীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। ফলে, হঠাৎ ভার্চুয়াল অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে কূটনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে—
মোদী কি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের মুখোমুখি হওয়া এড়ালেন?
ট্রাম্প-মোদী সাক্ষাৎ বাতিলের ইঙ্গিত
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনা ছিল, কুয়ালালামপুর সম্মেলনের ফাঁকে মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। ট্রাম্প নিজে মালয়েশিয়ার আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন, যা বিরল ঘটনা, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানের সদস্য নয়, শুধুমাত্র ‘ডায়ালগ পার্টনার’।
২০১৭ সালে একবার ট্রাম্প এবং ২০২২ সালে জো বাইডেন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাই এবার ট্রাম্পের অংশগ্রহণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল।
মোদী ও ট্রাম্পের এই সম্ভাব্য সাক্ষাৎকে ঘিরেই চর্চা ছিল যে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্কসংক্রান্ত অচলাবস্থা ভাঙতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতি সেই সম্ভাবনায় আপাতত ইতি টানল।
বাণিজ্য ইস্যুতে টানাপোড়েন
সম্প্রতি ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে কিছুটা টান পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কারণে ভারতের উপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
ওয়াশিংটন দাবি করেছে, এই তেল আমদানি মস্কোর যুদ্ধযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখছে। পাশাপাশি, কৃষি ও দুগ্ধবাজারে মার্কিন প্রবেশাধিকার নিয়ে স্থগিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তিও সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়িয়েছে।
তবুও গত দুই মাসে দু’বার ফোনে কথা বলেছেন দুই নেতা। সম্প্রতি দীপাবলির দিন ট্রাম্প মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন করেছিলেন। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, “আগামী কয়েক সপ্তাহে” মোদীর সঙ্গে বৈঠক হতে পারে এবং তাতে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করার আশাও প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু আসিয়ান সম্মেলনে মোদীর ভার্চুয়াল উপস্থিতি সেই সাক্ষাতের সুযোগ কার্যত নষ্ট করল।
বিরোধীদের কটাক্ষ
কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তে সরাসরি কটাক্ষ করেছে প্রধানমন্ত্রীকে। দলের সাংসদ জয়রাম রমেশ এক্স-এ লিখেছেন,
“মোদী কুয়ালালামপুর যাচ্ছেন না, কারণ তিনি ট্রাম্পের সামনে পড়তে চান না। হয়তো এখন তাঁর মনে বাজছে সেই পুরনো গান, ‘বাচকে রে রহনা রে বাবা, বাচকে রহনা রে।’’
রমেশ আরও লেখেন, “ট্রাম্পের প্রশংসায় সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দেওয়া এক জিনিস, কিন্তু এমন এক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রকাশ্যে মেলামেশা করা, যিনি ৫৩ বার দাবি করেছেন তিনি ‘অপরেশন সিঁদুর’ থামিয়েছেন এবং পাঁচবার বলেছেন ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে, সেটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।”
বিশ্লেষণ
ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আপাতত বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির সূক্ষ্ম ভারসাম্যে দাঁড়িয়ে। ট্রাম্পের এই সফর এবং মোদীর ভার্চুয়াল সিদ্ধান্ত উভয় দেশের কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারে নতুন অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলেছে।
একদিকে, আসিয়ান প্ল্যাটফর্মে ভারতের অনুপস্থিতি প্রশ্ন তুলছে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির গতি নিয়ে, অন্যদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ার ফলে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগও হাতছাড়া হল।
