আইজল: মায়ানমারে চলা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষ নতুন করে উদ্বাস্তু সঙ্কট তৈরি করেছে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে। গত কয়েক দিনে প্রায় তিন থেকে চার হাজার মানুষ মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানাল রাজ্য প্রশাসন।
মিজোরাম সরকারের এক সিনিয়র আধিকারিক নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, ২ জুলাই থেকে এখনও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছেন। মিজোরামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে সাপডাঙা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, “সংখ্যাটা চার হাজার নয়, আনুমানিক তিন হাজার।”
সংঘর্ষ কোথায়? কেন এই সঙ্কট?
মায়ানমারের উত্তর-পশ্চিমের চিন প্রদেশে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এই এলাকায় প্রভাবশালী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী চিন ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (CNDF) এবং চিনল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স –য হুয়ালনগোরাম (CDF-H)৷ এই দুই গোষ্ঠী এক সময় মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়লেও, সম্প্রতি ক্ষমতা দখল ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। এই গৃহসংঘর্ষের মধ্যেই সীমান্তবর্তী চিন জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ ভারতের মিজোরাম রাজ্যে পালিয়ে আসছেন।
মিজোরামের অবস্থান: মানবিক সাহায্য, সীমিত সম্পদ Mizoram Refugee Crisis
মিজোরামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, “এই সংঘর্ষ আমরা থামাতে পারি না। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আসছেন। মানবিকতার খাতিরে আমরা খাবার, জল ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছি।”
অধিকাংশ আশ্রয়প্রার্থী ঠাঁই পেয়েছেন চম্পাই জেলার জোখাওথার ও সইখুমপাই গ্রামে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এই দুই গ্রামে অব্যাহতভাবে মানুষ আসছেন এবং সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে।
রাজ্য সরকার পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে। তবে ইতিমধ্যেই খাবার, পানীয় জল, অস্থায়ী আশ্রয়ের চাপে প্রশাসন চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে।
মায়ানমার সরকারের নীরবতা
সংঘর্ষ ও উদ্বাস্তু প্রবাহ নিয়ে মায়ানমার সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর সঙ্কট
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমারে জান্তা সরকার ও গণতন্ত্রপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী অস্ত্র ধরেছে। চিন জনগোষ্ঠী পরিচালিত এই দুটি মিলিশিয়া বাহিনীও সেই প্রতিরোধের অংশ ছিল, কিন্তু এখন তারা নিজেরাই রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। তারই ফলশ্রুতি এই উদ্বাস্তু ঢল।