এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার (Ahmedabad Plane Crash) পরে যখন চারদিক থেকে আসতে শুরু করেছে শুধুই দুঃসংবাদ, ঠিক সেই সময় যেন অলৌকিক ভাবে মিলল এক প্রাণের খোঁজ। মৃতদেহের স্তূপের মধ্য থেকে হঠাৎই উঠে এলেন একজন মানুষ, যিনি শুধু বেঁচে আছেন তাই নয়—তিনি নিজেই হেঁটে উঠে এলেন অ্যাম্বুল্যান্সে! এই ঘটনা যেমন বিস্ময় জাগিয়েছে, তেমনই এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছে উদ্ধারকারী দল ও পরিবার-পরিজনদের।
ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি ভারতের এক পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে একটি ছোট আকারের যাত্রীবাহী বিমান খারাপ আবহাওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই উদ্ধারকারীদের দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে ছিল বিমানের ধ্বংসাবশেষ, ধোঁয়া ও আগুনের কুণ্ডলী এবং তারই মাঝে নিথর দেহ পড়ে ছিল একাধিক।
প্রথমে সকলেই ধরে নিয়েছিলেন যে কেউই বেঁচে নেই। কিন্তু হঠাৎই উদ্ধারকারীদের চোখে পড়ে বিমানের সামনের দিকে, আসনের নিচে আটকে থাকা একজন যাত্রী ধীরে ধীরে হাত নড়াচ্ছেন। সকলেই অবাক হয়ে যান—এ কি সম্ভব! তখনও তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু তাঁর হৃদস্পন্দন ছিল সচল। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে দেওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।

তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ঘটে এরপর। কিছুক্ষণের মধ্যেই, সেই ব্যক্তি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে নিজের পায়ে হেঁটে অ্যাম্বুল্যান্সে গিয়ে ওঠেন! তাঁর পরনে ছিল ছিঁড়ে যাওয়া জামাকাপড়, মুখে ও হাতে কয়েকটি কাটাছেঁড়া এবং মাথায় একটি চোটের দাগ, কিন্তু মুখে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি ও স্থিরতা।
এই দৃশ্য দেখে সেখানে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারীরা চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। একজন উদ্ধারকর্মী বলেন, “এটা যেন সিনেমার মতো। আমরা ভেবেছিলাম কেউ বাঁচেনি। কিন্তু ওনার উঠে দাঁড়ানো আমাদের নতুন শক্তি দিয়েছে।”
চিকিৎসকেরা জানান, ওই ব্যক্তির ভাগ্য অসাধারণ। বিমানের যে অংশে তিনি ছিলেন, সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। সম্ভবত বিমানের ধাক্কার পরপরই তিনি আসনের নিচে পড়ে যান, যার ফলে গুরুতর চোট থেকে বাঁচেন। এছাড়া দ্রুত উদ্ধার এবং উপযুক্ত চিকিৎসা তাঁকে প্রাণে বাঁচিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম রণজিৎ বিশ্বাস, বয়স ৩৫, তিনি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবার প্রথমে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত বলে ধরে নিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। যখন ফোনে জানানো হল উনি বেঁচে আছেন, তখন মনে হল কোনও স্বপ্ন দেখছি।”
এই ঘটনা শুধু এক অলৌকিক বেঁচে ফেরার গল্প নয়, এটি প্রমাণ করে যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আশা রাখা উচিত। বিপদের মুখেও কখন কী ঘটে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। রণজিৎ বিশ্বাসের এই বেঁচে ফেরা যেমন তাঁর পরিবারের জন্য নতুন জীবন নিয়ে এসেছে, তেমনই সকলের মনে ছড়িয়ে দিয়েছে অদম্য সাহস ও বিশ্বাসের বার্তা।
বিমান দুর্ঘটনার পর এমন জীবিতের খোঁজ পাওয়া কদাচিৎ। তবে রণজিৎ যেন জীবন্ত উদাহরণ হয়ে রইলেন, যে শুধু ভাগ্য নয়, মনোবল ও সময়োচিত পদক্ষেপও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করেছে বিমান সংস্থা ও সরকার। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান চলছে। তবে আপাতত সবার নজর রণজিতের দিকে, যিনি মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এসেছেন জীবনের মাটিতে—নিজেই হেঁটে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠে এক বিস্ময় তৈরি করে দিয়েছেন।