নির্বাচনের আগেই খোদ মন্ত্রীকে দৌড় করাল জনতা

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে (Minister)। নালন্দা জেলার হিলসা থানার মালাওয়ান গ্রামে বুধবার সকালে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রামবাসীরা নীতীশ কুমার সরকারের…

Minister attacked

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে (Minister)। নালন্দা জেলার হিলসা থানার মালাওয়ান গ্রামে বুধবার সকালে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রামবাসীরা নীতীশ কুমার সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রবণ কুমার এবং স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণ মুরারি ওরফে প্রেম মুখিয়ার উপর হামলা চালিয়েছে।

এই ঘটনায় মন্ত্রী ও বিধায়ককে প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ে গাড়ি বদল করে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। অন্যদিকে, পাটনার গার্দনীবাগে একটি স্কুলে ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনার তদন্তে পৌঁছানো পুলিশ আধিকারিকদের উপর জনতার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই দুটি ঘটনা বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জনগণের ক্ষোভ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

   

গত ২৩ আগস্ট পাটনার শাহজাহানপুর থানা এলাকায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নালন্দার হিলসার মালাওয়ান গ্রামের ৯ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বুধবার সকালে মন্ত্রী শ্রবণ কুমার এবং বিধায়ক কৃষ্ণ মুরারি মালাওয়ান গ্রামে পৌঁছান।

কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মন্ত্রী এবং বিধায়ক দুর্ঘটনার চার দিন পরে এসেছেন এবং তাঁদের সমস্যা শোনার পরিবর্তে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। গ্রামবাসীরা মুখ্যত মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নিজ জেলা নালন্দায় সড়ক নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছিলেন।

মন্ত্রী এবং বিধায়ক পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সান্ত্বনা দেওয়ার পরে যখন ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন গ্রামবাসীরা তাঁদের আরও কিছুক্ষণ থাকার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শ্রবণ কুমার জানান, তিনি সব পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ফেলেছেন এবং তাঁর অন্যান্য কর্মসূচিতে যোগ দিতে হবে।

এই কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামবাসীরা লাঠি-সোঁটা নিয়ে তাঁদের কাফিলের উপর হামলা চালায়। প্রায় এক কিলোমিটার ধরে মন্ত্রী এবং বিধায়কের কাফিলের পিছু নেওয়া হয়, এবং এই হামলায় একজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হন। পরে হিলসা ডিএসপি-সহ ভারী পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

একই দিনে পাটনার গার্দনীবাগে আরেকটি ঘটনায় জনতার ক্ষোভের শিকার হয় পুলিশ। গার্দনীবাগের অমলা টোলা বালিকা বিদ্যালয়ে এক ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, যার তদন্তে পৌঁছানো এসএইচও-র উপর জনতা হামলা চালায়। ক্ষুব্ধ জনতা স্কুলের মূল ফটক বন্ধ করে পুলিশ আধিকারিকদের ঘিরে ফেলে এবং তাঁদের উপর হামলা করে।

এই ঘটনায় এসএইচও-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হন। জনতা স্কুলের বাইরে হট্টগোল করে এবং পুলিশের উপর পাথর ছুঁড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisements

এছাড়া, গত ২৫ আগস্ট পাটনার অটল পথে আরেকটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে, যেখানে ১৫ আগস্ট ভাই-বোনের মৃত্যুর প্রতিবাদে জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পাথর ছুঁড়ে। এই ঘটনায় সাতজন পুলিশকর্মী আহত হন, এবং একজন এসআই-এর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পাটনার এসএসপি কার্তিকেয় শর্মা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল, যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর টুটু এবং আইনজীবী শ্বেত রঞ্জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ এই দুজনকে গ্রেফতার করেছে এবং মামলায় ২৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জেডি(ইউ) জেলা সভাপতি মোহাম্মদ আরশাদ এই ঘটনার জন্য বিরোধী দলগুলোর উসকানিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “মন্ত্রী এবং বিধায়ক সরকারের পক্ষ থেকে সান্ত্বনা জানাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বিরোধীদের ইন্ধনে কিছু লোক পরিস্থিতি বিকৃত করেছে।” তিনি পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, বিরোধী দল আরজেডি এই ঘটনাকে জনগণের ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে দেখছে। তেজস্বী যাদব বলেন, “জনগণের সমস্যা শোনার পরিবর্তে সরকার তাদের উপেক্ষা করছে। এই ঘটনা সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ।” নির্বাচনের আগে বিহারে এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং জনগণের সরকারের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

আবেদন খারিজ! ফের জেল যাচ্ছে আসারাম

নালন্দায় মন্ত্রীর উপর হামলা এবং পাটনায় পুলিশের উপর আক্রমণ রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জটিলতা প্রকাশ করে। পুলিশ এই ঘটনাগুলির তদন্তে নেমেছে, এবং আগামী দিনে এই ঘটনাগুলি নির্বাচনী প্রচারে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা দেখার বিষয়।