‘আমি পারলাম না’! মর্মান্তিক পরিণতি ডাক্তারি ছাত্রের

কোরবা, ছত্তিশগড়, ৬ সেপ্টেম্বর: ছত্তিশগড়ের কোরবা শহরের গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের (Medical Student )হোস্টেলে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বর্ষের এমবিবিএস ছাত্র হিমাংশু কাশ্যপ (২৪) আত্মহত্যা করেছেন।…

Medical Student

কোরবা, ছত্তিশগড়, ৬ সেপ্টেম্বর: ছত্তিশগড়ের কোরবা শহরের গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজের (Medical Student )হোস্টেলে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বর্ষের এমবিবিএস ছাত্র হিমাংশু কাশ্যপ (২৪) আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় তার সহপাঠীরা হোস্টেলের ঘরে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পান।

বারবার চেষ্টা করেও দরজা খোলা না যাওয়ায় তারা দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে এবং হিমাংশুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। ঘটনাস্থল থেকে একটি আত্মহত্যার নোট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে লেখা ছিল, “মুঝসে নাহি হো পায়া, আমি সরি, পাপা (আমি পারিনি, বাবা, আমি দুঃখিত)।” এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের উপর পরীক্ষার চাপের ভয়াবহ পরিণতির একটি করুণ উদাহরণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।

   

কোরবা সিভিল লাইন্স থানার সিটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ ভূষণ এক্কা জানিয়েছেন, হিমাংশু কাশ্যপ কলেজ ক্যাম্পাসের হোস্টেলে থাকতেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিনি ২০২৪ সালে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং এই বছর পুনরায় পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

কলেজের ডিন ড. কে কে সাহারে জানান, “পরীক্ষায় ভালো ফল না করার চাপে তিনি এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, হিমাংশু নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিলেও মানসিক চাপের কোনো লক্ষণ প্রকাশ্যে দেখাননি।

এই ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর রিপোর্ট দায়ের করেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে, তবে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার চাপই এই আত্মহত্যার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাগত চাপের বিষয়টিকে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ভারতে, বিশেষ করে মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উপর তীব্র চাপ পরিলক্ষিত হয়। ২০১৫ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে, এবং ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।

Advertisements

কোরবার এই ঘটনা এই ধরনের প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার মতো রাজ্যে একাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষার চাপে আত্মহত্যা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে উদয়পুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে স্বেতা সিং নামে এক এমবিবিএস ছাত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন, যিনি কলেজ কর্মীদের মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। এই ধরনের ঘটনাগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। হিমাংশুর এক সহপাঠী বলেন, “ও খুব মেধাবী ছিল, কিন্তু পরীক্ষার চাপ সবাইকে ভয় পাইয়ে দেয়। আমাদের কলেজে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়।” অনেকে মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

শারদ সৃজনী সম্মানে ‘হাউসিং পুজো’কে স্বীকৃতি, দায়িত্বে প্রাক্তন ফুটবলাররা

হিমাংশু কাশ্যপের এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এই ঘটনার তদন্ত শেষ হলে আরও তথ্য প্রকাশ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।