বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের (এনবিএ) নেত্রী মেধা পাটকারকে (medha patkar) ২৪ বছরের পুরোনো একটি মানহানির মামলায় গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, দিল্লির সাকেত আদালতের জারি করা একটি অ-জামিনযোগ্য ওয়ারেন্টের (এনবিডব্লিউ) ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলাটি দিল্লির বর্তমান লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিনয় কুমার সাক্সেনার দায়ের করা।
গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর সাকেত আদালত মেধাকে (medha patkar) মুক্তির নির্দেশ দেয়, তবে এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মামলাটি ২০০০ সালে শুরু হয়েছিল, তখন সাক্সেনা গুজরাটের একটি এনজিও, ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সিভিল লিবার্টিজের প্রধান ছিলেন।
মামলার পটভূমি (medha patkar)
২০০০ সালের ২৪ নভেম্বর মেধা পাটকার (medha patkar) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘ট্রু ফেস অফ প্যাট্রিয়ট’। এই বিজ্ঞপ্তিতে তিনি সাক্সেনাকে ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে হাওয়ালা লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। এছাড়াও, তিনি দাবি করেন যে, সাক্সেনা গুজরাটের মানুষ ও সম্পদকে বিদেশি স্বার্থের কাছে ‘বন্ধক’ দিচ্ছেন।
এই অভিযোগের জবাবে ২০০১ সালে সাক্সেনা মেধার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। এই সময়ে সাক্সেনার এনজিও সর্দার সরোবর প্রকল্পকে সমর্থন করছিল, যেখানে মেধার (medha patkar) নেতৃত্বাধীন নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন এই বাঁধ প্রকল্পের বিরোধিতা করছিল।
২০২৪ সালের ২৪ মে, দিল্লির একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মেধাকে (medha patkar) ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৫০০ ধারায় (মানহানি) দোষী সাব্যস্ত করে। আদালত মন্তব্য করে যে, মেধার বক্তব্য শুধু মানহানিকরই নয়, সাক্সেনার জনসাধারণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে রচিত। তাঁকে পাঁচ মাসের সাধারণ কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার সাজা দেওয়া হয়।
তবে, ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল, অতিরিক্ত সেশন জজ বিশাল সিং মেধাকে (medha patkar) এক বছরের প্রোবেশনের শর্তে মুক্তি দেন, এবং জরিমানা ১০ লক্ষ থেকে কমিয়ে ১ লক্ষ টাকা করেন। আদালত উল্লেখ করে যে, মেধার সামাজিক কাজ এবং পুরস্কারের রেকর্ড বিবেচনায় কারাদণ্ডের প্রয়োজন নেই।
গ্রেফতারের কারণ
মেধা পাটকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় কারণ তিনি ২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রোবেশন বন্ড জমা দেননি এবং আদালতে হাজির হননি। সাকেত আদালতের বিচারক বিশাল সিং বলেন, “মেধা পাটকার ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করছেন এবং সাজার শর্ত মানতে অস্বীকার করছেন।” শুক্রবার সকালে দিল্লি পুলিশের একটি দল তাঁর বাসভবনে পৌঁছে তাঁকে হেফাজতে নেয়।
দুপুর ১২:৩০-এ তাঁকে সাকেত আদালতে বিচারক বিপিন খারবের সামনে হাজির করা হয়। মেধার আইনজীবী আদালতের কাছে মুক্তির আবেদন করেন, যাতে তিনি প্রোবেশন বন্ড জমা দেওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেন। আদালত তাঁকে বেল বন্ড জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
অবশেষে এল বড় সুখবর, একলাফে কমল সোনার দাম!
জনপ্রতিক্রিয়া এবং বিতর্ক
মেধার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে সমাজকর্মীদের উপর সরকারি দমননীতি বলে সমালোচনা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়, “মেধা পাটকারের গ্রেফতারি সমাজকর্মীদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি এটিকে আইনের শাসনের জয় বলে মনে করছেন, দাবি করে যে মেধা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। এই ঘটনা ভারতে সমাজকর্মীদের উপর আইনি চাপ এবং স্বাধীন মত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মেধা পাটকারের পটভূমি
মেধা পাটকার নর্মদা উপত্যকায় সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের প্রাক্তনী এবং ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ পিপলস মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তাঁর কাজের জন্য তিনি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন।
তবে, তাঁর আন্দোলন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পের সমর্থকদের সঙ্গে। এই মামলাটি তাঁর এবং সাক্সেনার মধ্যে দীর্ঘদিনের আইনি সংঘর্ষের একটি অংশ, যা ২০০০ সালে মেধার দায়ের করা একটি মামলা থেকে শুরু হয়েছিল, যেখানে তিনি সাক্সেনার এনজিওর প্রকাশিত বিজ্ঞাপনকে মানহানিকর বলে অভিযোগ করেছিলেন।
আইনি পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ
মেধা পাটকার আইনজীবীরা জানিয়েছেন যে, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০২৫ সালের ২৫ এপ্রিল, তিনি দিল্লি হাইকোর্টে তাঁর দোষী সাব্যস্তের বিরুদ্ধে আবেদন প্রত্যাহার করে নেন, তবে নতুন আবেদন দাখিলের স্বাধীনতা পেয়েছেন। আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশে তাঁকে প্রোবেশন বন্ড জমা দিতে হবে, অন্যথায় সাজা পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে সমাজকর্মীদের আইনি লড়াই এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে।
মেধা পাটকারের গ্রেফতারি এবং পরবর্তী মুক্তি ২৪ বছরের পুরোনো মানহানির মামলাকে আবারও আলোচনায় এনেছে। এই ঘটনা শুধু তাঁর এবং সাক্সেনার মধ্যে আইনি সংঘর্ষেরই প্রতিফলন নয়, বরং ভারতে স্বাধীন মত প্রকাশ এবং সমাজকর্মের উপর আইনি চাপের একটি উদাহরণ। মেধার আইনি লড়াই এবং তাঁর সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে এই মামলার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে।