১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে (Independence Day) মাংস বিক্রি ও পশুহত্যা নিষিদ্ধ করার নির্দেশকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দিল্লি থেকে মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা—দেশের একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সরাসরি মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি থেকে শুরু করে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা আদিত্য ঠাকরে, এমনকি মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারও।
দিল্লি পুরসভার নির্দেশ অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট সমস্ত মাংসের দোকান ও কসাইখানা বন্ধ রাখতে হবে। একই ধরনের নির্দেশ জারি করেছে মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজীনগর ও কল্যাণ-দোম্বিভ্যালি পুরসভা। কল্যাণ-দোম্বিভ্যালি পুরসভা আরও জানিয়েছে, ১২ আগস্ট যদি পশুহত্যা বা মাংস বিক্রি হয়, তাহলে মহারাষ্ট্র পুরসভা আইনের আওতায় পদক্ষেপ করা হবে।
তেলঙ্গানার হায়দরাবাদেও জারি হয়েছে একই ধরনের নির্দেশ। গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (জিএইচএমসি) ঘোষণা করেছে, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমীর দিন সব কসাইখানা ও মাংসের দোকান বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশকে তীব্র সমালোচনা করেছেন স্থানীয় সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ তিনি লেখেন, “মাংস খাওয়া এবং স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মধ্যে কী সম্পর্ক? তেলঙ্গানার ৯৯ শতাংশ মানুষ মাংস খান। মাংস নিষিদ্ধ করা মানে মানুষের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা, জীবনযাপন, সংস্কৃতি, পুষ্টি ও ধর্মাচরণের অধিকার কেড়ে নেওয়া।” ওয়েইসির অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অযৌক্তিক।
এদিকে, মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারও এই নির্দেশের বিরোধিতা করে বলেছেন, “বড় বড় শহরে নানা জাতি ও ধর্মের মানুষ বাস করেন। আবেগের প্রশ্নে একদিনের জন্য মানুষ মেনে নিতে পারেন, কিন্তু মহারাষ্ট্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসে বারবার এমন নির্দেশ জারি করা হলে তা মেনে নেওয়া কঠিন।”
শিবসেনা (ইউবিটি)-এর নেতা আদিত্য ঠাকরের বক্তব্য আরও সরাসরি। তিনি বলেছেন, “পুরসভার কমিশনারের কাজ রাস্তার গর্ত সারানো, মানুষের সুবিধার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা—কে কী খাবেন তা নির্ধারণ করা নয়। স্বাধীনতা দিবসে আমরা কী খাব, তা ঠিক করার অধিকার আমাদের আছে। নবরাত্রির সময় আমাদের বাড়িতে প্রসাদেও মাছ ও চিংড়ি থাকে—এটাই আমাদের সংস্কৃতি এবং হিন্দুত্ব।” আদিত্যর মতে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সমান এবং এর জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারকে সাসপেন্ড করা উচিত।
তবে, মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা পক্ষের মুখপাত্র অরুণ সাওয়ান্ত দাবি করেছেন, বিজেপি-শিবসেনা-এনসিপি জোট সরকার মাংস নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বদনাম করার চেষ্টা করছে।
এই বিতর্কে স্পষ্ট, স্বাধীনতা দিবসে মাংস নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং তা সাংবিধানিক অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্নে রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি করছে। সমর্থকদের দাবি, এটি দিনের মর্যাদা ও অনুভূতিকে সম্মান জানাতেই করা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীদের মতে, স্বাধীনতার দিনে মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির পরিপন্থী।