মাটির নিচে গুপ্তধন! জবলপুরে পাওয়া গেল লক্ষ টন সোনার সম্ভার

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার সিহোরা তহসিলের মাহাঙ্গওয়া-কেওয়ালরি অঞ্চলে সম্প্রতি এক বিপুল সোনার খনির (Gold discovery Jabalpur) সন্ধান পাওয়া গেছে, যা দেশের খনিজ ক্ষেত্রে এক বড় মাইলফলক…

Massive Gold Deposits Found In Madhya Pradesh: Scientists Confirm Treasure Beneath Jabalpur

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলার সিহোরা তহসিলের মাহাঙ্গওয়া-কেওয়ালরি অঞ্চলে সম্প্রতি এক বিপুল সোনার খনির (Gold discovery Jabalpur) সন্ধান পাওয়া গেছে, যা দেশের খনিজ ক্ষেত্রে এক বড় মাইলফলক হতে চলেছে। বহু বছরের অনুসন্ধান ও নমুনা পরীক্ষার পর এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের কথা নিশ্চিত করেছেন ভূতাত্ত্বিকরা। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই সোনার মজুত, এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টন সোনা উত্তোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জবলপুর আগে থেকেই লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এবার সোনার সন্ধান এই জেলার খনিজ সম্ভারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। রাজ্যের ভূতাত্ত্বিক ও খনিজ সম্পদ দফতরের আঞ্চলিক অফিস থেকে পরিচালিত এক বিস্তৃত ভূ-সমীক্ষার মাধ্যমেই এই সোনার অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়।

   

সোনার সঙ্গে মিলেছে কপার ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুও:
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শুধুমাত্র সোনা নয়— এই অঞ্চল থেকে তামা (কপার) ও আরও কিছু মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। ভূতত্ত্ব দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসে আমরা সোনার স্পষ্ট উপস্থিতি পেয়েছি। সেই সঙ্গে রয়েছে কপার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধাতুও। এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে মধ্য ভারতের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় খনিজ আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি।”

আগে থেকেই ছিল পূর্বাভাস, এবার মিলল প্রমাণ:
জবলপুরের পাশের কাটনি জেলাতেও আগে সোনার সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তবে তখনকার অনুসন্ধান দৃঢ় প্রমাণ দিতে পারেনি। এবারে জবলপুরের নিশ্চিত তথ্য সেই পুরনো অনুমানকে আরও জোরদার করে তুলছে। ফলে গোটা অঞ্চলটিই এখন খনিজ ও খনন বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

পূর্বপ্রস্তুত খনন পরিকাঠামো বড় সুবিধা:
জবলপুর বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের অন্যতম খনিজ রপ্তানিকেন্দ্র। এখানে ইতিমধ্যেই ৪২টি খনি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যেগুলি থেকে লৌহ আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, লেটারাইট, চুনাপাথর ও সিলিকা বালির মতো খনিজ উত্তোলন করা হয়। এখানকার লৌহ আকরিক চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। নতুনভাবে সোনার সন্ধান পাওয়ায় এই জেলা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই অঞ্চলটি খনির জন্য বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই প্রস্তুত। নতুনভাবে সোনার খনন চালু করতে অতিরিক্ত বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে না। এটি একটি বড় সুবিধা।”

Advertisements

পরবর্তী ধাপে আরও গভীর অনুসন্ধান:
এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে এবার শুরু হবে আরও গভীরতর অনুসন্ধান। বিশেষজ্ঞ দলগুলি এখন সম্পূর্ণ মজুতের পরিমাণ এবং অর্থনৈতিকভাবে খননযোগ্য স্তরের বিশ্লেষণ করবে। যদি সেগুলি ইতিবাচক প্রমাণিত হয়, তবে বাণিজ্যিক খনন খুব শীঘ্রই শুরু হতে পারে।

অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও রিজার্ভে নতুন সম্ভাবনা:
এই আবিষ্কার শুধু জবলপুর জেলার অর্থনৈতিক মানচিত্রই নয়, গোটা মধ্যপ্রদেশ এবং ভারতের খনিজ রিজার্ভেও এক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সোনা উত্তোলনের মাধ্যমে রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি, স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জাতীয় স্বর্ণ মজুতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি:
ভূতাত্ত্বিক এবং খনিজ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার ভারতের খনিজ অনুসন্ধান ক্ষেত্রে এক বিরল সাফল্য। এত বড় পরিসরে সোনার খনির সন্ধান গত কয়েক দশকে খুব কমই দেখা গেছে। সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে খনন প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে, তবে এটি ভবিষ্যতে জবলপুরকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করবে।

জবলপুরের মাহাঙ্গওয়া-কেওয়ালরি অঞ্চলের এই সোনার খনি শুধু খনিজ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে নয়, রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকেও এক যুগান্তকারী সন্ধান। রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় খনন সংস্থাগুলি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সোনা উত্তোলন যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে আগামী দিনে মধ্যপ্রদেশ ভারতের সোনার মানচিত্রে এক উজ্জ্বল স্থানে অবস্থান করবে—এমনটাই আশা করছে দেশবাসী।