ঝাড়খণ্ডে গুলির লড়াই, পুলিশের হাতে নিহত কুখ্যাত মাওবাদী নেতা

ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা জেলার সরান্ডা অরণ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে খতম হলেন কুখ্যাত মাওবাদী নেতা অমিত হাসদা ওরফে আপটান। তাঁর মাথার উপর ছিল ১০ লক্ষ…

Maoist With 10 Lakh Bounty Killed in Encounter in Jharkhand’s Chaibasa

ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা জেলার সরান্ডা অরণ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে খতম হলেন কুখ্যাত মাওবাদী নেতা অমিত হাসদা ওরফে আপটান। তাঁর মাথার উপর ছিল ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার। রবিবার পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সরান্ডা অরণ্যে এনকাউন্টার

   

পুলিশ সূত্রে খবর, এনকাউন্টারটি ঘটে পশ্চিম সিংভূম জেলার গইলকেরা থানার অন্তর্গত সরান্ডা অরণ্যে। দীর্ঘদিন ধরেই ওই অঞ্চলে মাওবাদীদের গোপন আস্তানার খবর পেয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী। শনিবার রাত থেকেই যৌথ অভিযান শুরু হয়েছিল, যেখানে অংশ নেয় ঝাড়খণ্ড পুলিশ, CRPF এবং কোবরা ব্যাটালিয়ন।

রবিবার ভোরে জঙ্গলে তল্লাশি অভিযানের সময় মাওবাদীরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর তরফ থেকেও পাল্টা গুলি চালানো হয়। প্রায় এক ঘণ্টার তীব্র গুলির লড়াইয়ের পর অমিত হাসদা খতম হয়।

বড় সাফল্য পুলিশে

ঘটনার বিষয়ে চাইবাসার পুলিশ সুপার পারস রানা জানান, “অমিত হাসদা দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় এবং ওড়িশা সীমান্তে মাওবাদী কার্যকলাপে সক্রিয় ছিল। একাধিক হামলার মূল হোতা ছিল সে। তার মাথার উপর ঘোষিত পুরস্কার ছিল ১০ লক্ষ টাকা।”

অভিযান চলাকালীন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে

একটি SLR রাইফে

মাওবাদী নথি ও অন্যান্য অস্ত্র

Advertisements

এই ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে সরান্ডা অরণ্যে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে, যাতে বাকি মাওবাদী দলীয় সদস্যদের খুঁজে বের করা যায়।

অমিত হাসদার বিরুদ্ধে অভিযোগ

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত অমিত হাসদা গত কয়েক বছরে একাধিক নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের টহলদল-এর উপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।

প্রধান অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. পশ্চিম সিংভূম ও সিমডেগায় পুলিশের উপর **আইইডি বিস্ফোরণ** ঘটানো।
  2. নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয় ও টহলদলকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ।
  3. জঙ্গলের ভেতরে স্থানীয় মানুষদের **জোরপূর্বক সহযোগিতা** করতে বাধ্য করা।
  4. মাওবাদী সংগঠনের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অমিত হাসদা মাওবাদীদের দক্ষিণ-পশ্চিম ঝাড়খণ্ড জোনাল কমিটির অন্যতম কমান্ডার ছিল ঝাড়খণ্ডের সরান্ডা অরণ্য বহু বছর ধরেই মাওবাদী গোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ঘন জঙ্গল, দুর্গম ভূখণ্ড এবং সীমান্তবর্তী অবস্থানের কারণে এটি মাওবাদীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। নিরাপত্তা বাহিনী বহু বছর ধরে সরান্ডা অরণ্যে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবারই মাওবাদীরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গোপন আস্তানা গড়ে তোলায় তাদের নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই এনকাউন্টারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সরান্ডা অরণ্য এবং তার আশেপাশের জঙ্গলাঞ্চলে বৃহত্তর তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। অন্যান্য মাওবাদী ক্যাডার ও নেতাদের খুঁজে বের করার জন্য CRPF, কোবরা ব্যাটালিয়ন এবং স্থানীয় পুলিশের যৌথ বাহিনী মাঠে নেমেছে।

পুলিশ সুপার পারস রানা জানিয়েছেন, “অমিত হাসদার মৃত্যুতে নিরাপত্তা বাহিনী বড় সাফল্য পেলেও, সরান্ডা অরণ্যে এখনও সক্রিয় মাওবাদী দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

অমিত হাসদার মৃত্যু ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী দমন অভিযানে একটি বড় মাইলফলক। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, মাওবাদী দমনে এই সাফল্য আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবুও সরান্ডা অরণ্যে মাওবাদীদের ঘাঁটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ও পরিকল্পিত অভিযান চালানো প্রয়োজন। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি অভিযানে ব্যস্ত, আর গোটা এলাকা জুড়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।