আবার ও ফারলো মঞ্জুর ধর্ষক রাম রহিমকে

Manoj Returns with Controversial Support for Rapist Ram Rahim জেলে বন্দি ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান এবং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত গুরমিত রাম রহিম (ram rahim)…

ram rahim case

Manoj Returns with Controversial Support for Rapist Ram Rahim

জেলে বন্দি ডেরা সচ্চা সৌদা প্রধান এবং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত গুরমিত রাম রহিম (ram rahim) সিংকে আবারও ২১ দিনের ফারলো মঞ্জুর করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এটি পঞ্চমবার যখন তাকে সাময়িকভাবে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হল। বুধবার সকালে, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ২০২৫, তিনি হরিয়ানার রোহতক জেলার সুনারিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। মুক্তির পর তিনি সরাসরি হরিয়ানার সিরসায় অবস্থিত তাঁর ডেরার সদর দফতরে যান এবং ফারলোর পুরো সময়কাল সেখানেই অবস্থান করবেন।

আইনজীবী জিতেন্দ্র খুরানা জানিয়েছেন

ডেরার মুখপাত্র এবং আইনজীবী জিতেন্দ্র খুরানা জানিয়েছেন, “গুরমিত রাম রহিম সিংকে (ram rahim) ২১ দিনের ফারলো মঞ্জুর করা হয়েছে।” এই সাময়িক মুক্তির খবর এসেছে এমন এক সময়ে যখন তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও তিনি বারবার জেল থেকে বাইরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

গুরমিত রাম রহিম সিং (ram rahim) ২০১৭ সালের আগস্টে একটি বিশেষ সিবিআই আদালতের রায়ে দুই শিষ্যার ধর্ষণ মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এছাড়াও, ২০১৯ সালে তিনি একজন সাংবাদিকের হত্যা মামলায় এবং ২০২১ সালে ডেরার প্রাক্তন ম্যানেজার রঞ্জিত সিংয়ের হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন।

যদিও রঞ্জিত সিংয়ের হত্যা মামলায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট গত বছর তাঁকে খালাস দিয়েছে, তবুও ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধের জন্য তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন। তবে, হরিয়ানা সরকার তাঁকে বারবার ফারলো বা প্যারোলের মাধ্যমে মুক্তি দিয়ে আসছে, যা সমালোচনার মুখে পড়েছে।

এই সর্বশেষ ফারলোটি তাঁর ২০২৪ সালে পঞ্চম মুক্তি। এর আগে তিনি জানুয়ারিতে ৫০ দিনের প্যারোল, তারপর আরও তিনবার সাময়িক মুক্তি পেয়েছিলেন। এবার তিনি সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতরে থাকবেন, যা তাঁর কারাদণ্ড শুরুর পর থেকে দ্বিতীয়বার। এর আগে তিনি বেশিরভাগ সময় উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার বারনাওয়া আশ্রমে অবস্থান করেছেন। ফারলোর সময় তিনি সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বলে আবেদন করেন, এবং হরিয়ানা সরকার তা মঞ্জুর করে।

চাকরিহারাদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলা, পুলিশের লাঠিচার্জে ক্ষোভের পারদ চড়ল

Advertisements

বিরোধী দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ

এই ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, গুরমিতের বারবার মুক্তির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ডেরা সচ্চা সৌদার হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে, এবং তাদের ভোট রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের নির্বাচনের সময় তাঁর মুক্তির সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর অক্টোবরে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তাঁকে ২০ দিনের প্যারোল দেওয়া হয়েছিল, যা বিরোধী দলগুলো তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিল।

হরিয়ানার ‘গুড কন্ডাক্ট প্রিজনার্স (টেম্পোরারি রিলিজ) অ্যাক্ট (ram rahim)

হরিয়ানার ‘গুড কন্ডাক্ট প্রিজনার্স (টেম্পোরারি রিলিজ) অ্যাক্ট, ২০২২’ অনুযায়ী, একজন বন্দি বছরে ৭০ দিনের প্যারোল এবং ২১ দিনের ফারলোর জন্য যোগ্য। জিতেন্দ্র খুরানা বলেন, “আমাদের ক্লায়েন্ট আইনি অধিকারের আওতায় এই সুবিধা পাচ্ছেন। এটাকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়।” তবে, সমালোচকরা বলছেন, অন্যান্য বন্দিদের তুলনায় গুরমিতকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) এর আগে তাঁর বারবার মুক্তির বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিল, যদিও হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়ে বলেছিল, এটি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার বিষয়।

সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতির পুত্র অংশুল ছত্রপতি, যাঁর পিতাকে গুরমিতের (ram rahim) নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল বলে রায় হয়েছিল, এই মুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “একজন ধর্ষক ও খুনির এভাবে বারবার মুক্তি পাওয়া বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করে। এটা সাক্ষীদের মনে ভয় জাগাতে পারে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, গুরমিতের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে তিনি এই সুবিধা পাচ্ছেন।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভারতে টাকা আর অন্ধভক্ত থাকলে সব সম্ভব।” আরেকজন প্রশ্ন তুলেছেন, “এটা কী ধরনের উদাহরণ স্থাপন করছে? ধর্ষণের ঘটনা কীভাবে কমবে?” তবে, ডেরার অনুসারীরা তাঁর মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে সিরসায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গুরমিতের ফারলোর সময় তাঁর কার্যকলাপের উপর পুলিশ নজর রাখবে। পূর্ববর্তী মুক্তির সময় তিনি সামাজিক কাজে অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। তবে, এই বারবার মুক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গুরমিতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সবার নজর রয়েছে।