জিরি নদীর তীরে সে এক সবুজ বাংলা, যেখানে মাথা কাটার ভয়ে বাঁচে বাঙালি

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নদীতে শীতের মরা স্রোত। দুপাশে ঘন ঝোপঝাড়। পায়ে চলা কিছু রাস্তা নদীর দু পারে এসে শেষ হয়েছে।নদীর ওপারে বাঙালিরা আতঙ্কে। যে কোনো সময়…

Manipur Violence, Ziri River, Bengali Refugees, Ethnic Conflict, Bengali Community Assam,Manipur, Assam, Silchar, Jiribam, BJP, Congress,

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নদীতে শীতের মরা স্রোত। দুপাশে ঘন ঝোপঝাড়। পায়ে চলা কিছু রাস্তা নদীর দু পারে এসে শেষ হয়েছে।নদীর ওপারে বাঙালিরা আতঙ্কে। যে কোনো সময় ফের হামলা হতে পারে। মণিপুরের জাতিসংঘর্ষের (Manipur Violence) জেরে ঘরছাড়া বহু বাংলাভাষী। তারা এপার থেকে পালিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন অন্যপারে-অসমে। এদিকটা আপাত শান্তিপূর্ণ। আমি বলছি দূরের এক সবুজ বাংলার কথা। যেখানকার কথা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা জানেনই না। বাংলাভাষী অধ্যুষিত এই অঞ্চলটি অসম ও মণিপুরে ছড়িয়ে আছে। সেখানকার জনজীবনে ভয়। মাথা কেটে নেওয়ার ভয়।

নদীর দুপারে আছে আমতলা, জামতলা, কদমতলা আর আছেন বহু বাংলাভাষী। জাতি সংঘর্ষ ও জঙ্গি হামলার জেরে মণিপুরের জিরিবাম জেলা থেকে বহু বাংলাভাষী ঠাঁই নিয়েছেন অসমের কাছাড় জেলায়। মণিপুরের মতো অসমের দিকেও হামলার আশঙ্কা বাড়ছে। চলেছে অসম পুলিশের বিশেষ নজরদারি। আম্ত:রাজ্য সীমানার জিরি নদীতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সদা সতর্ক। বন্ধ দুপারের যাতায়াত।

   

জাতি সংঘর্ষে মণিপুরে শতশত নিহত। এ রাজ্যের কুকি ও মেইতেই দুই প্রধান গোষ্ঠীর সংঘর্ষের মাঝে পড়েছেন বাংলাভাষীরা। বরাক-জিরি দুটি নদীর অংশে বসবাসকারী বাংলাভাষীরা অসম কিংবা মণিপুর দুই রাজ্যেই ‘লাঞ্ছিত’ বলে বারবার অভিযোগ ওঠে। দুই রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে বরাবরের এই বঞ্চনার অভিযোগ। বাঙালির এই বঞ্চনায় পশ্চিমবঙ্গে তেমন উদ্বেগ নেই। তবে কিছুটা নিকটবর্তী ত্রিপুরায় উদ্বেগ ছড়ায়।

জিরি ও বরাক নদী বরাবর অঞ্চলটি ভাগ হয়েছে। মণিপুরের অংশে জিরিবাম জেলা। অসমের দিকে পড়ছে কাছাড় জেলা। এখানকার বাসিন্দাদের উচ্চারণে বাংলাদেশের সিলেট-ময়য়মনসিংহের টান আছে। এদের অভিযোগ, অসম ও মণিপুরে কংগ্রেস শাসনে এমন লাগাতার সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি হয়নি। দুই রাজ্যে বিজেপি সরকারের আমলে হামলা-লাঞ্ছনা বেড়েছে।

মহিলা-শিশু সহ মোট ছয় জনকে অপহরণ ও খুনের পর থেকে মণিপুরের জিরিবাম জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। একইসঙ্গে ১১ যুবকের মৃত্যু ঘিরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো। মণিপুর সরকারের অভিযোগ, জিরিবাম জেলায় নিহত ওই ১১ জন জঙ্গি। তবে উপজাতি কুকি গোষ্ঠীর দাবি, নিহতদের জঙ্গি সাজিয়েছে বিজেপি সরকার। অভিযোগ ও প্রতি অভিযোগে ফের জ্বলছে মণিপুর। পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ।

জিরিবাম জেলায় নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় পড়শি রাজ্য অসমের শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শিশু, মহিলা ও যুবকদের সার সার কফিন নিয়ে যাওয়ার সময় কাছাড় জেলার সদর শহর শিলচরেও উদ্বেগ ও ভয় ছড়ায়। আশঙ্কা যেভাবে মণিপুর ফের অগ্নিগর্ভ হয়েছে তার জেরে ওপার থেকে আবার ঘরছাড়া বাংলাভাষীদের স্রোত ঢুকবে শিলচরে।

গত দেড় বছর ধরে কুকি ও মেইতেই জাতি সংঘর্ষে মণিপুর রক্তাক্ত। এই বিতর্কিত ও প্রবল আলোচিত ইস্যুটির মধ্যে পড়ে সেখানকার বাংলাভাষীদের নিদারুণ পরিস্থিতি। তারা ভয় নিয়ে বাঁচছেন। সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। বাঙালিত্বে গর্বিত পশ্চিমবঙ্গের এসব ভাবার সময় কই।